আরাকান আর্মি এই নামটি বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ অস্থির হওয়ার পরে এই ‘আরাকান আর্মি’ শব্দটি বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। মাত্র কয়েক বছর আগে তৈরি হওয়া এই আর্মি এত প্রাসঙ্গিক হল কীভাবে। এই আর্মির সাফল্যই বা কোন পথে।
জুলেখা নাসরিন, সাংবাদিক : আরাকান আর্মি মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এটি ইউনাইডেড লীগ অফ আরাকানের একটি সামরিক শাখা। ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরাকান আর্মি। কাচিনে মাত্র ২৬ জন সদস্যের উদ্যোগে ‘কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি’র সহয়তায় গঠিত হয় আরাকান আর্মি। ২৬ জন সদস্য নিয়ে পথ চলা শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। বর্তমানে এই আর্মির সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার কিংবা বেশি। এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। তবে বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমও এই বাহিনীর সদস্য। সামরিক শক্তি নয়, আরাকান আর্মির প্রকৃত শক্তি আরাকানের জনসাধারণের সমর্থন।
আরাকান আর্মি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জোট করে তাঁদের শক্তি ও প্রভাব দিনের পর দিন বৃদ্ধি করছে। ২০১৫ সালে আরাকান আর্মি টাং জাতীয় মুক্তিবাহিনী, মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মির সঙ্গে নর্দান অ্যালায়েন্স গঠন করে। ২০১৯ সালে এই সংগঠন গুলি একত্রিত হয়ে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স তৈরি করে। এই সমস্ত জোটগুলি আরাকান আর্মিকে সম্পদ সংগ্রহ করতে যেমন সাহায্য করেছে তেমনি বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাঁদের যুদ্ধ কৌশল আয়ত্ত করতেও সাহায্য করেছে। বর্তমানে আরাকান আর্মির সেনা মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- শান এবং কাচিন রাজ্য। এছাড়াও মায়ানমারের সাগাইং ও মাগওয়ে অঞ্চলে দেখা যায় আরাকান আর্মির সদস্যদের। সরকারি সেনার সঙ্গেও প্রয়োজনে অপারেশনও চালিয়ে থাকে আরাকান আর্মির সদস্যরা।
নানান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হলেও মায়ানমারের রাখাইন অত্যন্ত দরিদ্র একটি জায়গা। মায়ানমার সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিরোধ ও অবিচার রাখাইনের জনগোষ্ঠীকে ভিন্ন একটি মাত্রা দিয়েছে। আরাকান আর্মির সাফল্যের অন্যতম কারণ এই আর্মিতে নিযুক্ত তরুণ ও নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধারা। এই আর্মির অধিকাংশ যোদ্ধার বয়স ২০-৩০ বছর। বর্তমানে মায়ানমারের ৮০ শতাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মির সদস্যরা।
আরাকান আর্মির সফলতার অন্যতম কারণ রাখাইনের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য। এখানে সর্বত্র নদী ও খালের বিস্তার। রাস্তা খুব একটা ভালো না হওয়ায় নদীগুলিই মূলত আরাকান আর্মির পরিবহন ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তবে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ এই আর্মির সদস্যরা। তবে স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট, ওয়াকি-টকির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনে দক্ষ এই বাহিনী। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ উত্তর রাখাইনে আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরাকান আর্মির স্বায়ত্তশাসনের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে শুধু মায়ানমার নয়,পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।