সবে দুজনে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন কিন্তু সেই পথচলা এভাবে থেমে যাবে এত নৃশংস ভাবে তার অকাল সমাপ্তি ঘটবে তা কেউ আন্দাজ করতে পারেননি। হানিমুনে গিয়ে নাকি সুপারি কিলার দিয়ে স্ত্রী খুন করাচ্ছেন স্বামীকে। প্রশ্ন উঠছে এ কোন অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে সমাজ?
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক: গত ১১মে ইন্দোরের যুবক রাজা রঘুবংশীর সঙ্গে সোনমের বিয়ে হয়েছিল। গত ২০ মে স্ত্রীকে নিয়ে মেঘালয়ের উদ্দেশে পাড়ি দেন রাজা। ২৩ মে পৌঁছোন চেরাপুঞ্জিতে। কিন্তু তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ ছিল না ওই নবদম্পতির। ২ জুন, রাজার দেহ পচা গলা অবস্থায় মেঘালয়ে উদ্ধার হয়। রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ ফুট নীচে খাদের মধ্যে পড়ে ছিল রাজার দেহ। কিন্ত স্বামীর দেহ উদ্ধার হলেও তাঁর স্ত্রী সোনমের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই পরিবারের আশঙ্কা ছিল, রাজার মতো তাঁকেও কেউ খুন করে ফেলে দিয়েছেন অন্য কোথাও! কিন্তু তা তো একেবারেই নয়, এবার প্রকাশ্যে এল সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রাজার দেহের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা দা এবং বর্ষাতি উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় স্মার্ট ওয়াচও। কিন্তু মানিব্যাগ, সোনার চেন, আংটি বা মোবাইল— কিছুই পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায় কুপিয়েই খুন করা হয়েছে রাজাকে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালিয়ে যখন দেখা যায় যে খাদের মধ্যে পড়ে রয়েছে একটি দেহ, তাঁকে প্রথমে কোনভাবেই শনাক্ত করা যায়নি অবশেষে হাতের উল্কি দেখে রাজার ভাই তার দাদাকে শনাক্ত করেন।
কি ঘটেছিল রাজার খুনের আগে কয়েক ঘন্টায়? ২৩ মে শিলংয়ের নংরিয়াট গ্রামে ডাবল ডেকার লিভিং রুট ব্রিজ দেখার পর তারা দুজনেই নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁদের ভাড়া করা স্কুটি ২৪ মে সোহরার কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার আগে স্ত্রীর কথা হয় তার শ্বাশুড়ির সঙ্গে, কি কথা হয়েছিল? অডিয়ো ক্লিপে সোনমকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা এখন উপরে উঠছি। পরে কথা বলব’। জবাবে শ্বাশুড়ি বলছেন, ‘আজ নিশ্চয়ই তোমার উপোস’। ফের সোনমের গলা, ‘হ্যাঁ, আমি উপোস ভাঙব না’। বস্তুত, ট্রেকিং করতে যে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না, সেকথাও শ্বাশুড়িকে জানিয়েছিলেন তিনি। বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা ঘন জঙ্গলে আছি, এখানে কিছুই পাওয়া যায় না। খুব খাড়া জায়গা। আমি ওকে আসতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু শোনেনি। ক্লান্ত লাগছে। এখানে খাবারও ভালো নয়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে’।
রাজার মা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতেও পারেননি ছেলের সঙ্গে। শনিবার রাতে গাজিপুরে একটি ধাবা থেকে খোঁজ মেলে সোনমের। চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেখানে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। স্বামীকে খুনের দায়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফাতর করে পুলিশ। তাঁকে জেরা করে চক্ষু চড়কগাছ তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, হানিমুনে গিয়ে স্বামীকে খুন করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল সোনমের কারণ এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সোনমের।