মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও মুজিব স্মৃতি মোছার আপ্রাণ সেই চেষ্টা চলছেই। সেজন্যই তো এবার বাংলাদেশের ইতিহাস মুছতে মৌলবাদীদের দাবির কাছে মাথানত করলেন ইউনুস। বাংলাদেশের টাকা থেকে সরানো হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি। রবিবার বাংলাদেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এই নোট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে।
মাম্পি রায়, সাংবাদিক- দিনটা ছিল ২০২৪-এর ৫ অগাস্ট। আন্দোলনের চাপে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর গণভবনে ঢুকে অশ্লীল লুঠপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। আসবাব, দামি জিনিস থেকে শুরু করে পোশাক আশাক এমনকি হাঁস-মুরগি-ছাগলের মতো পশুপাখিকেও নির্লজ্জের মতো লুঠ করেছে উত্তেজিত জনতা। তার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিগুলি ভাঙচুর করে তাতে প্রস্রাব করে নির্লজ্জতার প্রমাণ দিয়েছে আন্দোলনকারীদের একাংশ। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও মুজিব স্মৃতি মোছার আপ্রাণ সেই চেষ্টা চলছেই। সেজন্যই তো এবার বাংলাদেশের ইতিহাস মুছতে মৌলবাদীদের দাবির কাছে মাথানত করলেন ইউনুস। বাংলাদেশের টাকা থেকে সরানো হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি। রবিবার বাংলাদেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে এই নোট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে। তারপরই এই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। কেন ৭১-এর ইতিহাস মুছতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইউনুস? সেই প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
রবিবার বাংলাদেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নোট বাজারে ছাড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, নতুন সিরিজের এই নোটে কোনও মানুষের ছবি থাকছে না। শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্থাপত্য, ঐতিহাসিক স্থান ও প্রকৃতির ছবি থাকবে ওই নতুন নোটে। মোট তিনটি নোট প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। এগুলি হল, ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার। ২০ টাকার নোটে রয়েছে হিন্দু মন্দিরের ছবি, ৫০ টাকায় রয়েছে মুসলিম স্থাপত্যের ছবি। অন্যদিকে ১০০০ টাকার নোটে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দিরের ছবি। ধাপে ধাপে পরবর্তী নোটগুলির ডিজাইনও বদল করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। সবমিলিয়ে ইউনুসের যে মৌলবাদ এবং হিন্দুবিরোধী চরিত্রটা সবার সামনে চলে আসছিল, সেই ছবিকে ভুল প্রমাণ করতেই এই প্রচেষ্টা ইউনুসের।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের টাকায় বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল। এতবছর ধরে সেই টাকাই চলে আসছে। ২০২৪-এর অগাস্টে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ক্ষমতায় আসেন মহম্মদ ইউনুস। তারপরই বাংলাদেশজুড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে মৌলবাদের দল। ৭১-এর ইতিহাস মুছতে মরিয়া চেষ্টা চলতে থাকে। কখনও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্থাপত্যের নামবদল, কখনও মুজিবের মূর্তি ও স্মৃতিবিজড়িত স্থানে বুলডোজার ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা। সবটাই মুজিবের স্মৃতি মোছার একান্ত প্রয়াস ইউনুসের। অবশেষে ইউনুসের হাত পড়ল বাংলাদেশের নোটে। ইউনুসের এই তৎপরতায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের একটা বড় অংশ। দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক দলগুলিও। কিন্তু তাতে কেয়ার করেন না ইউনুস। একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখাটাই যে ইউনুসের একমাত্র লক্ষ্য। ইতিমধ্যে হাসিনার সরকারকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এবার বঙ্গবন্ধু মুজিবুরের স্মৃতি জড়িত নোটটুকুও পাল্টে ছাড়ল ইউনুসের সরকার। এভাবে কতদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ইউনুস, সেটাই এখন দেখার।