এসএসসি-র নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া এবার পৌঁছল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, তা একাধিক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর এবং অসাংবিধানিক।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, নিজস্ব প্রতিনিধি- সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী এসএসসি-র পুরনো নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে চিহ্নিত অযোগ্যদের সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। এমন কেউ ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকলে, তা অবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি। পাশাপাশি, ফের নতুনভাবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দেয় আদালত।
এই নির্দেশকে সামনে রেখেই এবার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন একাংশ চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের প্রশ্ন, যেই নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে কেন অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হবে? আবেদনকারীদের বক্তব্য, এই অতিরিক্ত ১০ নম্বরের ফলে প্রকৃত যোগ্য পরীক্ষার্থীরা মার খেতে পারেন। অভিযোগ, এই নম্বর দেওয়া হচ্ছে কোনও নিরপেক্ষ মানদণ্ড ছাড়াই।
একই সঙ্গে মামলাকারীরা আদালতে জানিয়েছেন, নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। সিঙ্গেল বেঞ্চ সেই বিষয়ে কোনও দিশা দেয়নি। তাই এবার ডিভিশন বেঞ্চে সেই বিষয়গুলিও উত্থাপিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। নির্দেশ ছিল, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নির্দেশ মেনে মে মাসের শেষে এসএসসি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেই বিজ্ঞপ্তিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নয়।
এর আগেও লুবানা পারভিন নামে এক প্রার্থী হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ৪৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট নিয়মগুলি সম্পূর্ণ অবৈধ। বয়সে ছাড়, অভিজ্ঞতার নম্বর ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে বলেই তাঁর দাবি।
উল্লেখ্য, আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে লিখিত পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল ৫৫ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে ৩৫ নম্বর এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য ১০ নম্বর। নতুন নিয়োগে এই কাঠামো বদলে যায়। এখন লিখিত পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে ৬০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১০ নম্বর। ২৫ নম্বর কমিয়ে আনা হয়েছে ‘শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা’ ও ‘লেকচার ডেমোস্ট্রেশন’-এ। এই দুই ক্ষেত্রেই থাকবে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর করে। অর্থাৎ, ইন্টারভিউ সহ শিক্ষকতার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করবে ৩০ নম্বর।
এই নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিই চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের কাছে ঘোর আপত্তির কারণ। তাঁদের দাবি, এত বড় ধরনের পরিবর্তন যদি আনা হয়, তাহলে তার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিক কমিশন। না হলে যোগ্য প্রার্থীরা বারবার বঞ্চিত হবেন।
বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে কী অবস্থান নেবে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ, সেদিকেই এখন নজর গোটা রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের।