ধর্মঘটের দিন কর্মক্ষেত্রে না আসলে কাটা যাবে বেতন। নবান্ন থেকে এমনই নির্দেশিকা জারি করা হয়। বুধবার কেন্দ্রীয় নীতি ও পদক্ষেপের বিরোধিতা জানিয়ে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন সহ ১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। ধর্মঘট সফল করতে রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘট সমর্থকেরা। তবে সরকার পোষিত ও সরকারি স্কুলগুলিতে এই ধর্মঘটের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল একশো শতাংশ।
নাজিয়া রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- একাধিক কেন্দ্রীয় নীতি ও পদক্ষেপের বিরোধিতা জানিয়ে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন সহ ১০টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। তবে এই ধর্মঘটের পাল্টা বিরোধিতা করেছে তৃণমূল সরকার। নবান্ন থেকে কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয় সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্য। নির্দেশিকায় বলা হয় যে, ধর্মঘটের দিন অফিসে না আসলে কর্মজীবনের একটা দিন বাদ যাবে এবং সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বেতনও কাটা যাবে। পাশাপাশি জানানো হয় রাজ্য সরকার ও সরকার পোষিত সমস্ত অফিস বুধবার খোলা থাকবে। এদিন রাজ্য সরকারের কোনও কর্মী ‘ক্যাজ়্যুয়াল লিভ’ নিতে পারবেন না। এছাড়া নেওয়া যাবে না অর্ধদিবস ছুটিও।
সরকারি নির্দেশিকা মত, বুধবার ধর্মঘট থাকলেও খোলা ছিল সরকারি সব দফতর ও স্কুল কলেজ। এদিন সরকারি স্কুলে শিক্ষক- শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল একশ শতাংশ। শিয়ালহ টাকি বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাকের বক্তব্য, “শিয়ালদা টাকি বয়েজ স্কুলের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম দুটো ক্যাম্পাসের সব শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরাই উপস্থিত আছেন। পার্টটাইম শিক্ষক শিক্ষিকারাও উপস্থিত আছেন। স্কুলের পার্টটাইম নিয়ে টোটাল স্টাফ ১১০ জন। আর শুধু টিচার যদি ধরা হয় তাহলে মর্নিং সেকশনে ৪৮ জন শিক্ষক শিক্ষিকাও ডে-সেকশনে প্রধান শিক্ষিকা সহ ৩৫ জন। প্রত্যেকেই উপস্থিত। ” নারানদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানান, ” নারানদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের সব শিক্ষক শিক্ষিকারাই বুধবার ধর্মঘটের দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। ” তবে সোমবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ। ভারী বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন রাজ্যে একাধিক জায়গা। যে কারণে কোনও কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় সেই সংখ্যাও বেড়েছে বলেও জানান শিক্ষক- শিক্ষিকাদের একাংশ।
বুধবার ধর্মঘটের দিন সব সরকারি কর্মক্ষেত্র খোলা থাকায় সেখানে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সমস্ত সরকারি বিভাগের কাছে এদিন কর্মচারীদের উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিনের ধর্মঘটে সামিল বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলি ও বামপন্থী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে নবান্নের নির্দেশিকার কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারীর বক্তব্য,
” বঞ্চনার অবসান না ঘটিয়ে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের সরকারি হুমকির নোটিশকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।” শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটের দিন যদি কোনও শিক্ষক – শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী স্কুলে উপস্থিত না থাকেন তাহলে সেই সংশ্লিষ্ট অনুপস্থিত শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের ঐদিনের বেতনের রিকুইজিশন না পাঠানোর নির্দেশ দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের এই নির্দেশের সমালোচনা করে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান,”মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দেখছি নবান্নের উপর দিয়ে যাচ্ছে। তারা সরাসরি বন্ধের দিন অনুপস্থিত শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের ঐদিনের বেতনের রিকুইজিশন পাঠাতে না বলেছে। এতে কিছু দুর্বল চিত্তের শিক্ষক শিক্ষাকর্মী প্রভাবিত হতে পারে, কিন্তু আদর্শগতভাবে যারা শক্ত পোক্ত তারা এই নির্দেশ অমান্য করে ধর্মঘট পালন করবে। এই রুটিন হুমকি কোনো কাজে আসবে না।”