দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ফোরাম বুধবার ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল। প্রায় ২৫ কোটি কর্মী এই বনধে সামিল হবেন বলে সংগঠনগুলি জানিয়েছিল। কিন্তু সারাদিনের ছবি বলল অন্য কথা। বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ছাড়া প্রায় সচল স্বাভাবিক রইল জনজীবন।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ বনধের প্রভাবের কথা বলতে গেলে শুরুতেই বলতে হবে কেরালার কথা, একমাত্র কেরালাতেই বোধহয় বনধ তার নিজের ছবি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সকাল থেকেই কেরালা জুরে বিভিন্ন জায়গায় বন্ধের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ থেকেছে স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, অফিস। খোলেনি ব্যাঙ্কও। বামশাসিত কেরালার রাস্তায় লোকজনের সংখ্যা হাতেগোনা। বাস, গাড়ি চলছে না। বুধবার শ্রমিক সংগঠনের ডাকা এই বন্ধের সঙ্গে বিহারে জুড়ে গেল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও। পাটনায় মিছিলে এক সঙ্গে পা মেলাতে দেখা গেল কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবকে। জেহানাবাদ-সহ একাধিক রেল স্টেশনে চলে অবরোধ।
মিশ্র প্রভাব দেখা গেল উড়িষ্যাতে। সকাল থেকেই জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। উড়িষ্যার খুরদায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন বাম সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর সমর্থকেরা। যদিও পুলিশ সেই অবরোধ কিছুক্ষণের চেষ্টাতেই তুলে দেয় তবে এই অবরোধের কারণে জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া দেশজুড়ে আর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি।
কেন্দ্রীয় শ্রমকোড বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও বংশীহারী দুই জায়গাতেই জনজীবনে পড়ল বিক্ষিপ্ত প্রভাব। এদিন রাস্তায় সরকারি বাস চললেও যাত্রী ছিল হাতেগোনা, বেসরকারি বাসের দেখা প্রায় মেলেনি বললেই চলে । বনধের সমর্থনে বংশীহারীতে পথে নামেন বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা । পিকেটিং চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন সিপিএমের বংশীহারী এরিয়া কমিটির সদস্য মাজেদার রহমান । অভিযোগ, বচসার এক পর্যায়ে তাঁকে চড় মারেন বংশীহারী থানার আইসি অসীম গোপ । পরে মাজেদারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
কলকাতাও এদিন অন্যান্য দিনের মতই স্বাভাবিক ছিল। যেটুকু অশান্তি সকালে যাদবপুর এবং বেলার দিকে কলেজ স্ট্রিটে হয়। বাদবাকি জনজীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। একদা বাম দুর্গ হিসেবে পরিচিত যাদবপুরে সকালেই অশান্তি শুরু হয়। ৮বি বাস স্ট্যান্ড, যাদবপুর, বাঘাযতীন স্টেশনে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল শুরু করেন বনধ সমর্থকরা। মিছিল থেকে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, যার জেরে তিনি আহত হয়েছেন বলে অভিযো। গাঙ্গুলিবাগান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বাম কর্মী-সমর্থকদের কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। অভিযোগ, একের পর এক দোকানে ঢুকে শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়। সৃজনকে চ্যাংদোলা করে এলাকা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ আটক করা হয় তাঁকে। ধাক্কাধাক্কিতে সৃজনের পরনের শার্ট ছিঁড়ে যায়। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, তিনি আহত হয়েছেন।
ট্রেনের ক্ষেত্রেও সাময়িক ব্যাহত হয় পরিষেবা। বেলঘড়িয়া ব্যারাকপুর শ্যামনগর কোন্নগরের মত কয়েকটি জায়গায় রেল লাইনে নেমে বিক্ষোভ দেখান ধর্মঘটীরা। তবে তা সাময়িক। বেলা গড়াতেই সব স্বাভাবিক। অর্থাৎ সকাল থেকেই যতই ঝান্ডা হাতে পথে থাকুন না কেন বনধ সমর্থনকারীরা, প্রায় স্বাভাবিক জনজীবন জানান দিল রাজ্যে এখন বনধ আসলে ফসিলস।