চূড়ান্ত মেধা তালিকায় নাম থাকার পরেও কেন নিয়োগ থেকে বঞ্চিত? বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে সেই প্রশ্নে ফের বিপাকে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে মামলাকারী মানসী পালের পক্ষে কড়া সওয়াল করেন আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী। আদালত জানিয়ে দেয়, কমিশনের জারি করা ‘রিজেকশন মেমো’ অবৈধ।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- বোলপুরের বাসিন্দা মানসী পাল ২০১৫ সালের টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অভিযোগ, পরবর্তী ২০১৬ সালের আপার প্রাইমারির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাঁকে ‘অতিরিক্ত বয়স’-এর অজুহাতে ইন্টারভিউয়ে বসতে দেয়নি এসএসসি।
২০১৯ সালে মানসী কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি শেখর ববি সারাফের এজলাসে মামলা দায়ের করেন। সেখানেই আদালত স্পষ্ট জানায়, যাঁরা ২০১৩ সালের টেটের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে আবেদন করেছিলেন কিন্তু পরীক্ষা না-হওয়ায় ২০১৫ সালের পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হন, তাঁদের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে বয়সসীমা ছাড় দিলেও কোনও সমস্যা নেই।
এই রায়ের ভিত্তিতে এসএসসি মানসীকে ইন্টারভিউয়ে বসার অনুমতি দেয়। প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী, চূড়ান্ত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। পরে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চও সেই মেধা তালিকাকে বৈধতা দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ তখন স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, চূড়ান্ত মেধা তালিকায় নাম থাকা প্রার্থীদের আর কোনও তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই, প্রত্যেককে নিয়োগ দিতে হবে।
কিন্তু আইনজীবী আশীষবাবুর দাবি, মানসী প্রথম কাউন্সেলিংয়ে ডাক পেলেও তাঁকে নিয়োগপত্র না দিয়ে ফের ‘বয়সসীমা’-র অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এসএসসি একটি ‘রিজেকশন মেমো’ ইস্যু করে জানায়, অতিরিক্ত বয়সের জন্য নিয়োগ সম্ভব নয়। ৭ মাস ধরে শুনানির পর বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু স্পষ্ট বলেন, যেহেতু ওই প্রার্থী সিঙ্গল বেঞ্চ ও ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন, তাঁকে কোনওভাবেই বঞ্চিত করা যায় না। এসএসসি’র রিজেকশন মেমো অবৈধ।
আদালতের নির্দেশ, দুই সপ্তাহের মধ্যে মানসী পালকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। যে দিন তাঁকে কাউন্সেলিংয়ে থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই দিন থেকেই তাঁর চাকরিতে যোগদানের হিসেব কার্যকর হবে।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বারবার একই ‘অজুহাত’-এ যোগ্য প্রার্থীকে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছে এসএসসি? হাইকোর্টের নির্দেশে ফের একবার স্পষ্ট, আইন না মানার খেসারত দিতে হচ্ছে এসএসসি-কে।