শ্রাবণ মাস মানেই প্রতি শনি ও রবিবার থেকেই শহুরে মানুষ দেখতে পাবেন বাঁকে করে জল নিয়ে তারকেশ্বর বা পাগলা বাবা বা অন্য কোনও শিবমন্দিরে চলেছেন। শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালতে। কথিত আছে, এই জল ঢালা অত্যন্ত পূণ্যের। সেই নিয়েই আলোচনা আজকের প্রতিবেদনে।
প্রবীর মুখার্জী, সাংবাদিক- বাংলা ক্যালেন্ডারের চতুর্থ মাস শ্রাবণ। সাধারণত, জুলাই-অগাস্ট জুড়েই এই শ্রাবণ মাস। ইংরাজি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা মাসের শুরু হয়। তেমনই এই বছরে শ্রাবণ মাস শুরু হতে চলেছে জুলাই মাসের ১৮ তারিখে। এই মাসটিকে অনেকেই ‘বাবার মাস’ বলে অভিহিত করে থাকেন। এই বছরে চারটি সোমবার পড়েছে শ্রাবণ মাসে। কোনও বছরে আবার ৫ টি সোমবারও থাকে শ্রাবণ মাসে। আসলে ৩১ দিনের কোনও মাসের সোমবার প্রথম তিন দিনের মধ্যে এলেই সেই মাসে পাঁচটি সোমবার সম্ভব হয়। যাই হোক। এই বছরে জুলাই মাসের ২১ ও ২৮ তারিখ সোমবার। অগাস্ট মাসের ৪ এবং ১১ তারিখ সোমবার। ১৭ ই অগাস্ট শ্রাবণ মাসের শেষ দিন সংক্রান্তি তিথি।
যাঁরা শিবের উপাসক, তাঁদের শৈব বলা হয়। শৈবদের দৃঢ় বিশ্বাস শ্রাবণ মাসে নাকি স্বয়ং ভোলামহেশ্বর নেমে আসেন মর্ত্যে। এই সময়ে শিবের পুজো করলে বিশেষ ফললাভ সম্ভব। কারণ, ভক্তিভরে নিষ্ঠা সহকারের শিবের উপাসনা করলে শিব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। নিশ্চয় জানেন, তিনি নাকি একটি বেলপাতাতেই তুষ্ট থাকেন। ভোলাভালা ঠাকুর , বেলপাতা-আকন্দ ফুল-ধুঁতরো ফুল-ধুঁতরো ফল আর বাতাসা বা নকুলদানা দিলেই তিনি নাকি ভক্তের পুজো গ্রহণ করে থাকেন। তবে শর্ত একটাই এই পুজো যেন নিষ্ঠা সহকারে ভক্তিভরে হয়ে থাকে। সোমবারটিকে বাবার দিন বা বাবার বার বলে ধরে নেওয়া হয়।
সোমবার অনেকেই শিবঠাকুরের অভিষেক হয়ে থাকে। অনেকেই শুধুমাত্র গঙ্গাজল শিবের মাথায় ঢেলে থাকেন। অনেকে আবার আখের রস দিয়ে শ্রাবণ মাসে সোমবারে শিবলিঙ্গের অভিষেক করে থাকেন। এতে নাকি ভালো ফল লাভ সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই। সাধারণত, কাঁচা দুধ-ঘি-মধু দিয়ে অভিযেক করে থাকেন বেশিরভাগ ভক্ত। অনেকে আবার সর্ষের তেল দিয়েও স্নান করিয়ে থাকেন। শত্রুনাশ হয়ে থাকে বলে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া কাঁচা দুধের সঙ্গে অনেকে চিনি মিশিয়ে নেন। সুগন্ধী মিশ্রিত জল দিয়েও অভিষেক করিয়ে থাকেন। মনে করা হয়, সুগন্ধী মিশ্রিত জল অথবা ঘি-মধু-কাঁচা দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানোর পর আতর দিয়ে শিবলিঙ্গে গায়ে লেপন করলে যাবতীয় শত্রু নাশ তো বটেই এমনকি শরীরের যাবতীয় রোগ দূর হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সমৃদ্ধি লাভও সম্ভব। আর , জল ঢালার সময়ে অবশ্যই ঔঁ নমঃ শিবায়ঃ অথবা ঔঁ নমঃ পশুপতয়েঃ বলে মন্ত্রোচ্চারণ করলে ভালো ফল লাভ সম্ভব। অভিষেকের পর মনের ইচ্ছা মতো ফল দিয়ে দেবাদিদেবকে নিবেদন করতে পারেন। মিষ্টি দিতে ভুলবেন না। মিষ্টি না হলে বাতাসা বা নকুলদানা বা চিনিও দিতে পারেন।