ওয়েব ডেস্ক: ‘মা’ শব্দটি উচ্চারণেই রয়েছে কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কম্পন। শাস্ত্রের কঠিন ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে অন্তত এক লাইনে বোঝাতে গেলে এমনটাই বলতে হয়। প্রতিটি জীব সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই শব্দ। তাঁর জীবন্ত, রক্তমাংসের উষ্ণ অনুভূতি লাভ করেছে জীব জগৎ, নাহলে যে সৃষ্টি ব্যার্থ। পালনকত্রী, জ্ঞানদাত্রী ও জন্মদাত্রী তিনি। জীবন যাপন কিংবা আধ্যাত্মবাদ,জ্ঞান সে যেমনই হোক সব উত্তরের শেষে ‘মা’ করুণা, মমতা ও স্নেহময়ী প্রতীক। কথা প্রসঙ্গে তাই এমন এক মায়ের কথা এলো যিনি নিজের সম্পর্কে বলতেন, “আমি সৎ-এর ও মা, অসৎ-এর ও মা, পাতানো মা নই, গুরু মা নই, সত্যি মা।”
তাঁর মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একবার ভাগ্নে হৃদয়কে স্বয়ং শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেব বলেছেন, “এঁর ভিতর যে আছেন, তিনি ফোঁস করে উঠলে ত্রিভূবনে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ও সারদা, সাক্ষাৎ স্বরস্বতী”। সারদামণি চট্টোপাধ্যায়ের স্বরূপ কি তবে? যে মাতৃরূপের গূঢ় ব্যাখ্যা মেলে শাস্ত্রে, এমন সামান্য রূপে কি তিনি রক্তমাংসের শরীরে অবস্থান করেন?মা নিজের মুখেই তাঁর যে জন্মবৃত্তান্তটি বলেছেন ভক্তদের, সেই দিকে একবার তাকানো যেতে পারে। তাহলেই চোখে পড়বে যে দৈব মহিমা কী ভাবে ঘিরে ছিল তাঁকে আজীবন। “আমার মা শিওড়ে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলেন।
ফেরবার সময় হঠাৎ শৌচে যাবার ইচ্ছা হওয়ায় দেবালয়ের কাছে এক গাছতলায় যান। শৌচের কিছুই হলো না, কিন্তু বোধ করলেন, একটা বায়ু যেন তাঁর উদরমধ্যে ঢোকায় উদর ভয়ানক ভারী হয়ে উঠল। বসেই আছেন। তখন মা দেখেন লাল চেলি পরা একটি পাঁচ-ছ বছরের অতি সুন্দরী মেয়ে গাছ থেকে নেমে তাঁর কাছে এসে কোমল বাহু দুটি পিঠের দিক থেকে তাঁর গলায় জড়িয়ে ধরে বলল, আমি তোমার ঘরে এলাম মা। তখন মা অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সকলে গিয়ে তাঁকে ধরাধরি করে নিয়ে এল। সেই মেয়েই মায়ের উদরে প্রবেশ করে; তা থেকেই আমার জন্ম।” তিনি জগদ্ধাত্রী?
শ্রী মা সারদার জন্মের আগে তাঁর মা শ্যামসুন্দরী দেবী সপ্নাদেশ পান। চতুর্ভুজা সিংহবাহিনী দেবী একটি পা তুলে বসে আছেন। শ্যামসুন্দরী দেবীকে আদেশ করেছিলেন জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করার জন্য। পরবর্তীকালে শ্রী মা জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় জয়রামবাটিতেই থাকতেন। তিনি চতুর্ভুজা নন, দ্বিভুজেই অনায়াসেই বহন করতেন দেবীত্ব ও মাতৃত্ব।
সেবার জন্মতিথিতে মা ছিলেন কলকাতায়। গঙ্গাস্নান সেরে, উদ্বোধন কার্যালয়ের বাড়িতে ফিরে তিনি লক্ষ্য করেন যোগীন-মায়ের ব্যস্ততা। মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, “এসব কি গো যোগেন? মায়ের দিকে একটু চেয়ে থেকে, গভীর প্রীতির সঙ্গে মার চিবুক স্পর্শ করে যোগীন-মা বললেন,, আজ যে তোমার জন্মতিথি, মা!”
ভুবনভোলানো হাসি হেসে মা বললেন, “ও মা তাই? ” এরকমই ছিল তাঁর উদাসীনতা! রুদ্রাক্ষের মালা পড়ে দক্ষিণ পা খাট থেকে ঝুলিয়ে বসে ছিলেন মা,আর সেখানেই পুষ্পাঞ্জলি অর্পন করছেন সন্ন্যাসীরা অগণিত ভক্তরা। যেন সাক্ষাৎ জগদ্ধাত্রী মূর্তি দ্বিভুজা, মনুষ্যরূপী। রামকৃষ্ণ মঠ ও আশ্রমগুলিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর মহিমা দুর্গাপুজোর থেকেও অনেক বেশি। বড় বড় প্যান্ডেল করে বিরাট আকারের মায়ের মূর্তি স্থাপনা করা হয় সেখানে। দেবী মূর্তিকে লাল বস্ত্র পরানো হয়। প্রচুর গয়না ও বড় ফুলের মালা পরেন মা। মায়ের মূর্তিগুলিকে প্রচুর সোনার গয়না দিয়ে সাজানো হয়। বলা হয় দেবী দুর্গার পুনর্জন্ম হয়েছিল মা জগদ্ধাত্রী রূপে। মা সারদা ছিলেন যেন দেবী জগদ্ধাত্রীর পুনর্জন্ম।