Date : 2024-04-30

প্রতিমার চক্ষুদানের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রবীণদের চোখ

শাহিনা ইয়াসমিন, রিপোর্টার : শিল্পীর তুলির টানে জেগে ওঠে দেবী দুর্গার ত্রিনয়ন। দুর্গা পুজোর সূচনা হয় চক্ষুদানের মধ্য দিয়েই। কিন্তু চোখ যারা আঁকেন কুমোরটুলির সেই প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে অধিকাংশ শিল্পী বয়সের ভারে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে চলেছে। প্রতিমার চক্ষুদানের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রবীণদের ক্ষীণ দৃষ্টি। তাই অনেক সময় দেবীর চোখ আঁকতে অন্যের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের।

চোখ হল আত্মার প্রতিচ্ছবি, যা ফুটিয়ে তোলে আত্মার শক্তিকে। চোখ কখনও মুখের চেয়েও বেশি কথা বলে। সেই চোখ তুলির টানে ফুটিয়ে তোলা কম শক্ত নয়। তার উপর মাতৃপ্রতিমার চক্ষুদান। কুমোরটুলিতে প্রবীণ থেকে নবীন সব মিলিয়ে পাঁচশোর বেশি মৃৎশিল্পী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্যবয়স্ক এবম প্রবীণ। বয়সের ভারে চোখে উঠেছে চশমা। স্বাভাবিকভাবেই নির্মিত প্রতিমার চোখ আঁকতে গিয়ে তাঁদের নিজেদের চোখে পড়ছে চাপ। বেশিরভাগ শিল্পীরাই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাই অনেক মৃৎশিল্পীরা প্রতিমার চোখ আঁকার জন্য কুমোরটুলির বাইরে থেকেও শিল্পী ভাড়া করে আনেন এই সময়।

রীতি অনুযায়ী, দেবীপক্ষের সূচনা হয় মহালয়ার দিনে। তাই অতীতে অনেক জমিদার বাড়িতে এই শুভ দিনটিতেই প্রতিমার চক্ষুদান করা হতো। তবে ধর্মমতে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় মহাসপ্তমীতে। এখন সেই নিয়মে বদল এসেছে। আগে প্রতিমা তৈরি হতো অল্প সংখ্যক। এখন কুমোরটুলির ঘরে ঘরে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। কারণ ক্লাবের সংখ্যার পাশাপাশি রয়েছে বাড়ির পুজো। তাই দেবী দুর্গার প্রতিমার সংখ্যা বেড়েছে। ফলে প্রতিমার চক্ষুদানে পরিশ্রম অনেকগুণ বেড়েছে শিল্পীদের। এমনটাই জানালেন প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল।

কুমোরটুলির শিল্পীদের পাশে সর্বদা থাকে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতি। তাই প্রতিবছর চক্ষু পরীক্ষা শিবির করা হয় কুমোরটুলিতে। এছাড়া মৃৎশিল্পীদের নিয়মমতো চক্ষু পরীক্ষা ও চশমা দেওয়া হয়। এমনটাই জানান কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল। সূক্ষ্ম থেকে অতিসূক্ষ্ম কাজ করতে চোখে চাপ পড়া স্বাভাবিক। তা যদি আবার প্রতিমার চোখ আঁকা হয়, তাহলে তো আর কথাই নেই। ছোট প্রতিমা হোক বা বড়ো প্রতিমা, দুর্গা হোক বা অসুর সকলের চোখ আঁকতে গিয়ে শিল্পীদের চোখে চাপ পড়ছে। তবে শুধু চোখ আঁকা নয়, প্রতিমা তৈরি করতেও চোখে সমস্যা হচ্ছে অনেক মৃৎশিল্পীদের।