প্রবীর মুখ্যার্জি : সাপে কামড়ালে অনেক সময়েই আমাদের মাথার ঠিক থাকে না। একটা গভীর দুশ্চিন্তা কুড়ে কুড়ে খায়। সাধারণ জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমরা। অনেকেই সেই সময়ে ক্ষত স্থানে কাপড় বা দড়ি দিয়ে শক্ত বাঁধন দিয়ে দেয়। যাতে সাপের বিষ গোটা শরীরে ছড়িয়ে না পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার সাবান বা লকোহল দিয়ে ক্ষতস্থান ভালো করে ধুয়ে পরিস্কার করে দেয় যাতে বিষটা সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। মাঠে কাজ করতে গিয়েও অনেকে সাপের কামড় খেতে পারেন। ক্ষতস্থানে শক্ত বাঁধন দিয়ে রোগীকে মাঠের মধ্য দিয়েই হাঁটিয়ে রাস্তায় নিয়ে এসে তারপর সাইকেল বা বাইক বা আম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী নিজেই সাইকেল বা বাইক চালিয়ে হাসপাতাল যান।
একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত বলে জানালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও বিশিষ্ট সর্প বিশেষজ্ঞ ডাঃ দয়াল বন্ধু মজুমদার। তাঁর মতে সাপে কামড়ানো মাত্রই রোগীকে নিয়ে যেতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা নিকটবর্তী হাসপাতালে। কাছাকাছি যেটা হবে, সেখানেই আগে নিয়ে যেতে হবে সাপে কামড়ানো রোগীকে। নাঃ ক্ষতস্থানে কোনও রকম বাঁধন নয়। তাহলে কিন্তু, রোগীকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা একদমই নয়। বরং বাইক ম্বুলেন্স হলে ভালো হয় বাইক ম্বুলেন্সের সুবিধা হল, মাঠের আলের উপর দিয়েও অনায়াসে চলতে পারে দু-চাকার এই আধুনিক ম্বুলেন্স এখন প্রায় সব জায়গাতেই এর প্রচলন রয়েছে আর ক্ষতস্থান কোনও ক্ষার বা লকোহল দিয়ে ধোয়া একদম নয় কারণ্, কুকুর-বিড়ালে কামড়ানো আর সাপে কামড়ানো দুটো এক ব্যাপার নয় বরং ক্ষতস্থানে রগরালে তাতে বড় ক্ষতি হতে পারে রোগীর
অনেকেই শহরের দিকে বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু, ডাঃ মজুমদারের মতে, একেবারেই এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বরং নিয়ে যান একেবারে কাছের কোনও হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন রাজ্য সরকারের তত্্পরতায় সব জায়গাতেই ন্টি ভেনাম মজুত থাকে শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে গেলে অনেকটা সময় চলে যায় সময় বাঁচানোটা সাপে কামড়ানো রোগীর ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর
আরও একটি সাপের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন ডাঃ দয়াল বন্ধু মজুমদারকালাচ সাপ অন্যান্য সাপে কামড়ালে যেমন ক্ষতস্থান চোখে পড়ে কালাচ কামড়ালে কিন্তু সেটা দেখা যায় না অনেক সময়ে রোগীর পেটে ব্যথা বা মাথায় ব্যথা বা বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন ডাক্তারবাবু দেখে সাপে কামড়ানোর কথা বললেও রোগীর পরিজনরা তা মানতে নারাজ হন কারণ, কোনও ক্ষত নেই শরীরের কোথাও রোগীর পরিজনদের চাপে চিকিত্্সা শুরু করলেও, কিছুক্ষণ পরই রোগীর মৃত্যু হয় তখন, ভুল চিকিত্্সার অভিযোগ তোলেন রোগীর পরিজনেরা কিন্তু, ডাক্তারের অনুমান সঠিক ছিল বলেই জানালেন ডাঃ মজুমদার এক্ষেত্রে রোগীর শিবনেত্র নজরে আসে ডাক্তারদের অর্থাত্ রোগীর চোখ প্রায় কপালে উঠে যায় আসলে এটা ঠিক , যে কালাচ সাপের কামড়ে শরীরে কোথাও ক্ষত দেখা যায় না এই সাপ মানুষের ঘামের গন্ধে ঘরে ঢোকে রাতের বেলা মানুষ যেখানে ঘুমায়, তার পাশেই ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘাম চাটতে আসে ভয়ঙ্কর এই সাপ পাশ ফেরার সময়ে ঘুমন্ত ব্যক্তির শরীরের কোনও অংশ সাপের গায়ে লাগলেই সাপ আত্মরক্ষার্থে কামড় দেয় সেই ব্যক্তিকে কিন্তু, কোনও ক্ষত দেখা যায় না পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় যন্ত্রণা বুকেও হতে পারে অবিলম্বে নিয়ে যেতে হবে কাছের হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগনির্ণয় বা চিকিত্্সার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত ডাক্তারদের উপর অবশ্যই সময় পেলে এবং সঠিক চিকিত্্সা হলে রোগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন
অনেকে কার্বোলিক সিডের উপর নির্ভর করে থাকেন আসলে কার্বোলিক সিড কোথাও ঢেলে রাখলে তার উপর দিয়ে সাপ গেলে সাপের শরীর পুড়ে যায় কারণ সাপ সরীসৃপ সাপের কোনও কান নেই সে শুনতে পায় না মানে, ছায়াছবিতে দেখা সাপুড়েদের বিনের সঙ্গে সাপের নৃত্য লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, সাপুড়ে বিনটা একেবারে সাপের মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বাজায়, সাপ সেই বিনের মুখটা ছোবল দেওয়ার চেষ্টা করে সাপের স্মৃতিশক্তিও প্রখর নয় সাপ বাঘের মতো হিংস্র নয় সাপ কামড়ায় নিজের আত্মরক্ষার্থে সাপ পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, আপনি দেখে দাঁড়িয়ে গেলে লক্ষ্য করবেন, সাপটা নিজের খেয়ালেই চলে যাবে। কিন্তু, সাপকে দেখে আপনি আঘাত করার চেষ্টা করলেই সাপ ফনা তুলবে, এবং ছোবল দেবে। সুতরাং, সাপকে দেখে অযথা ভয় পাওয়ার যেমন কিছু নেই। আবার সাপে কামড়ালেও অতিরিক্ত টেনশন না করে মাথা ঠান্ডা করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর সেটাই করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।