শাহিনা ইয়াসমিন, রিপোর্টার : বাঁচার জন্য প্রত্যেক মানুষকেই লড়াই করতে হয় সেই লড়াই সহজ নয়, যদি তা প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে হয়। আজ এমন একজনের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করাব যিনি সেই লড়াইটাই করছেন। আর প্লাস নিউজের একটি বিশেষ রিপোর্ট।
শব্দ ব্রহ্ম। শব্দেই ভরে রয়েছে জগত্ সংসার। শব্দহীন জগতের কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু তেমন এক জগত্ও রয়েছে। তেমনই এক শব্দহীন জগতের বাসিন্দা কালু সাহা। পঞ্চাশোর্ধ্ব কালু সাহার 5 বছর বয়সে ম্যানিনজাইটিস হয়। এই রোগ কেড়ে নেয় তাঁর কথা বলা ও শোনার ক্ষমতা। এ যে কত বড় ক্ষতি তা তখনই বুঝেছিল তেলেঙ্গাবাগানের মধ্যবিত্ত সাহা পরিবার। ছেলেবেলা থেকেই আঁকার প্রতি ভালোবাসা ছিল কালুবাবুর। সময় গড়াতে তা আরও তীব্র হয়।
একসময় হুবহু একেঁ দেওয়ার মতো ক্ষমতা তৈরি হয় তাঁর। এভাবেই নিজের শব্দহীন জগতকে রঙিন করেছেন রঙ-তুলির ছোঁয়ায়। পড়াশোনা তার হয়ে ওঠেনি। তাই আঁকাকে বাঁচার মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। রঙ তুলিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি মনীষীদের ছবি, গায়ক-গায়িকার ছবি এঁকেছেন কালুবাবু। বিনা প্রশিক্ষণে তাঁর আঁকা সেইসব ছবি তাক লাগিয়ে দিয়েছে শিল্প রসিকদের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বহু ছবি এঁকেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেইসব প্রতিকৃতি সাহাবাড়িতে তো আছেই, দোকানেও টাঙানো রয়েছে।
তেলেঙ্গাবাগানের কালু সাহার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে ফুটবলেও। ছেলেবেলা থেকেই ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন। ১৯৯৫ সালে স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড গেমসে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হয়ে আমেরিকা যান তিনি। ফুটবল খেলায় পাওয়া মেডেল তাঁর টুপিতে আজও ঝকমক করছে। বাড়ি ভর্তি শংসাপত্র। তবে খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পাওয়ায় ফুটবল ছাড়তে হয়েছে। খেলা-আঁকায় নাম হওয়ার পরও কালু সাহা শব্দময় এই সমাজে কদর পাননি। সেই হতাশা তাঁর আজও রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেন না। বাবার পান-সিগারেটের ছোট্ট দোকানে বসেই কালুবাবু ছবি আঁকেন।
কালুবাবু এখন কিছুটা হলেও কথা বলার চেষ্টা করেন। সদ্য মা হারা কালু সাহার বক্তব্য, একটা চাকরি হলে বেঁচে থাকাটা একটু সহজ হয়।
আর পাঁচজনের মতো তিনিও প্রায় সবকিছুই পারেন। তাই সমাজের চোখে প্রতিবন্ধী হলেও নিজেকে তা মনে করেন না কালুবাবু। সেটাই তাঁর শক্তি।