Date : 2024-04-30

ঐতিহ্য আর নস্টালজিয়াকে আঁকড়ে ধরে রেকর্ডের চাহিদাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন ইকবাল, ইমরানরা।

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক :- একটি বাক্স আর তার ওপর বড় থালার মতো কালো রঙের রেকর্ড। অনবরত ঘুরে চলেছে তা, আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে মিষ্টি মধুর সঙ্গীত। কলের গান। ‘অ্যান্টিক’ তকমা লেগেছে নামের আগে। তবে প্রযুক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে কি হেরেই গেছে এই কলের গান? কলকাতার লেনিন সরণির ওপর, ওয়েলিংটন স্ট্রিট ক্রসিংয়ের থেকে শিয়ালদহের দিকে একটু এগোলেই ফুটের ওপর চোখে পড়বে কয়েকটি হাতেগোনা দোকান যেখানে ঝুলছে এবং রাখা রয়েছে বড় বড় কালো থালা অর্থাৎ রেকর্ড। সেই সব দোকানগুলিতে জ্বলজ্বল করছে জীবন্ত ইতিহাস। কোনও ঝাঁ চকচকে দোকান নয়, ফুটপাথের উপরেই কাঠের শোকেস নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন। তাদের বয়স ৫০ এর ওপরে।

কেউ ৫২ বছর কেউ আবার ৬০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স হয়তো বাক্সে থাকা রেকর্ডগুলোর মতোই। বয়সের কারণে নুইয়ে পড়লেও রোজ এখানেই পুরোনো রেকর্ড নিয়ে বসে পড়েন মহম্মদ ইকবাল, ইমরানরা। কোথায় ভাল রেকর্ড আছে, খবর পেলেই দৌড় লাগান তাঁরা। এমনকি শহরের ভাঙাচোরা পুরোনো লোহা বিক্রির দোকানগুলোতেও নিয়মিত খোঁজ রাখেন তাঁরা। সেসব জায়গা থেকে খুঁজেপেতেই নিজেদের সংগ্ৰহ বাড়ান। শর্মিলী, ডিসকো ডান্সার, ‘ত্রিশূল’, ‘শোলে’ ‘চোরি চোরি’, ‘পাথর কে সানাম’ সিনেমাগুলোর গান আজও যত্ন করে রাখা ফুটপাতের ওই শোকেসগুলোয়। শুধু তাই নয়, বাংলা গানের রেকর্ডের চাহিদাও ভালই। শোকেসে শোভা পাচ্ছে পঙ্কজ মল্লিকের ‘শেষ হল তোর অভিযান’, মান্না দের ‘কফি হাউসের সেই আড্ডা ‘ রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের শ্যামা সঙ্গীত, নির্মলেন্দু চৌধুরীর ‘বাউল’ ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগই আছে বিভিন্ন সময়ে গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের সম্ভার। ফিরোজা বেগম থেকে দেবব্রত বিশ্বাস বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

খদ্দের যে খুব একটা কম হয়, তাও নয়। এখনও অনেক মানুষই কলের গানের খোঁজ নেন এই ফুটপাথেই। কেউ কেনেন সংগ্রহের জন্য, কেউ বা আবার আজও কলে দম দিয়ে রেকর্ড চাপিয়ে গান শোনেন। অনেকে আসেন যারা কেনেন না হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেন। গ্রামোফোন নেই বলে কেনার ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারেন না।
শুধু ফুটপাথে নয়। লেনিন সরণিতে একটি বিল্ডিং এর ভিতরে অবস্থিত একটি রেকর্ড দোকান আছে। প্রতিটি দোকান গুলিতে শুধু রেকর্ড নয় রয়েছে ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডিও। সাউন্ড সিস্টেম এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। কিন্তু কলের গানের সঙ্গে পুরনো দিনের সময়টাকে রিলেট করতে গেলেই তার মাদকতা রয়েছে।

যেমন ৩০০ টাকার রেকর্ড পাওয়া যায় এই দোকানগুলিতে, তেমনই হাজার পাঁচেক টাকার রেকর্ডও পাওয়া যায় এইসব দোকানেই। যতদিন শহরের বিভিন্ন বাড়িতে গ্রামোফোন থাকবে, ততদিন রেকর্ডের চাহিদাও থাকবে।