প্রবীর মুখার্জি, সাংবাদিকঃ পুরীতে গিয়েছেন, কিন্তু জগন্নাথ দেবের মন্দির দর্শন করেননি এবং প্রসাদ গ্রহণ করেননি এমন লোক কমই আছেন। এই প্রসাদ নিয়েই আজ অনেক না জানা কথা এই প্রতিবেদনে। এমনিতেই প্রায় দশ হাজার লোক প্রসাদ বসে গ্রহণ করেন প্রতিদিন। এছাড়াও প্রায় ৫ হাজার ভক্তকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবুও কোনও দিন প্রসাদে ঘাটতি পড়ে না। আবার উচ্ছিষ্টও হয় না। এমনই তার মাহাত্ম্য। কথিত আছে স্বয়ং মা লক্ষ্মী না কি তাঁর স্বামী এবং ভক্তদের জন্য প্রতিদিন ভোগ রান্না করে থাকেন। আর রথযাত্রার পর দিন থেকে শুরু করে উল্টোরথে আগের দিন পর্যন্ত মা লক্ষ্মী অভিমান করে রান্না করেন না। কেন এই অভিমান…
রথযাত্রায় মাসীর বাড়ি জগন্নাথ তার অগ্রজ বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে নিয়ে যান। সঙ্গে যান না তাঁর ঘরনী। কিন্তু, মন্দিরে পুজো বন্ধ হয় না। সেখানে এই কটা দিন ছবিতে নিত্য পুজোর আয়োজন করা হয়। তাই অভিমানী লক্ষ্মী দেবী রান্নাঘরে আসেন না।
এবার আসা যাক রান্নাঘর প্রসঙ্গে। রান্নাঘরকে ৯ টি ভাগে ভাগ করা হয়।এরমধ্যে দুটি ভাগের দৈর্ঘ্য আড়াই হাজার বর্গফুট। বাকি সাতটির দৈর্ঘ্য একটু কম। মোট ৭৫২টি উনুন রয়েছে রান্নার জন্য। এই রান্নাঘরে কোনও গ্যাসের চুল্লি বা ইলেকট্রিকের চুল্লি ব্যবহার করা হয় না। প্রতিটি উনুনের দৈর্ঘ্য ৩ বর্গফুট। উচ্চতা ৪ ফুট।রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় না কোনও ধাতব বাসন। পিতল-কাঁসা-তামা-রূপা-স্টিল-লোহার কোনও বাসন নেই সেখানে। মাটির পাত্রে রান্না হয় প্রতিদিন। শুধু তাই নয়। একবার রান্নার পরই সেই মাটির পাত্র আর ব্যবহার করা যায় না। অর্থাৎ প্রতিদিন নতুন মাটির পাত্রে রান্না করা হয় জগন্নাথ দেবের ভোগ।
উনুনে একটির উপর একটি করে মাটির হাঁড়ি বসানো হয়। ৯টি হাঁড়ি এভাবে বসানো হয়। কিন্তু, সবার আগে সবচেয়ে উপরের হাঁড়ির রান্নাটি আগে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এভাবে পর পর উপর থেকে নীচের হাঁড়িগুলিতে সম্পন্ন হয় প্রভুর ভোগ।
এক হাজার সেবক নিয়োজিত রান্নার কাজে। এরমধ্যে শুধু মাত্র ৫০০ জন রয়েছেন, শুধুমাত্র রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য। কেউ রয়েছেন মাটির পাত্র প্রতিদিন তৈরি করার জন্য। আর একদলের কাজ হল শুধুমাত্র তৈরি হওয়ার মাটির পাত্র জল দিয়ে ধোয়ার জন্য। নাঃ, রান্নাঘরে বাইরের জল ব্যবহার করা হয় না।রান্নাঘরের ভিতর দিয়েই বয়ে গিয়েছে গঙ্গা ও সরস্বতী নদী। বাইরে থেকে দেখা যায় না। সেই জল দিয়েই রান্না হয় মহাপ্রভুর ভোগ। বাইরের কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ এই রান্নাঘরে (Rannaghar)।
১২ বছর বয়স হলেই শুরু হয়ে যায় ট্রেনিং।যারা রান্নাঘরের সেবাইত আছেন, তারাই বংশানুক্রমিক এই কাজ করে আসছেন। ১০০টির উপর ভোগের পদ রান্না হয়ে থাকে প্রতিদিন।
আরও পড়ুন : নম্বর যোগে ভুল।শাস্তির মুখে একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা।