সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অভিনেতা সলমন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই কী এনসিপি নেতাকে খুন করা হল। বাবা সিদ্দিকি খুনের পর উঠছে প্রশ্ন। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডকে ভাড়াটে খুনির কাজ বলে মনে করছে পুলিশ। ১২ অক্টোবর অর্থাৎ দশেরাতে বান্দ্রা পূর্বের নির্মল নগরে ছেলের অফিসের সামনে আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হয় এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। বুকে এবং পেটে একাধিক ক্ষত হওয়ায় তাঁকে তড়িঘড়ি মুম্বইয়ের লালীবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। মুম্বইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চের তরফে জানান হয়েছে বাবা সিদ্দিকির দিকে ৬ রাউন্ড গুলি চালান হয়। এর মধ্যে ৩টি তাঁর দেহে লেগেছে। সিদ্দিকি খুনে ব্যবহৃত পিস্তল কুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
সূত্রের খবর, প্রথম গণেশ পুজোর সময় সিদ্দিকিকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় সফল হয়নি আততায়ীরা। এর আগে একাধিকবার সিদ্দিকির উপর হামলা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ধরমরাজ কাশ্যপ এবং কার্নাইল সিং দাবি করেছে, তারা কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলের সদস্য। এছাড়া বাবা খুনে আরও এক অভিযুক্ত রয়েছে পুলিশের নিশানায়। মহারাষ্ট্রের অপরাধ দমন শাখার ডিসিপি জানান, বাবা খুনের তদন্তে পুলিশের ১৫টি দল তৈরি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্মল নগর থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, অস্ত্র আইন এবং মহারাষ্ট্র পুলিশ আইনের নানা ধারায় মামলা রুজু করা হয়। অভিযুক্তেরা মাসখানেক ধরে বাবার গতিবিধির উপরে নজর রাখছিল। বাবার বাড়ি, অফিসের উপরেও চলে নজরদারি। বাবাকে খুনের জন্য অভিযুক্তদের আগাম ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ১৫ দিন আগে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়া হয়। মাসিক ১৪ হাজার টাকা ভাড়ায় মুম্বইয়ের কুর্লায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল আততায়ীরা খুনের আগে ২৫ থেকে ৩০ দিন সেখানে ছিল তারা। ঘটনার দিন অটোরিক্সা করে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, এই ঘটনায় আমি আশ্চর্য। বাবা সিদ্দিকির পরিবার ও সমর্থকদের পাশে আছি। মহারাষ্ট্র সরকারের উচিত নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা । রাহুল গান্ধী বলেন এই ঘটনাতে স্পষ্ট মহারাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। বিজেপি শিবিরের তরফেও বাবা হত্যার নিন্দা করা হলেও এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করার আবেদন জানান হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে বারবার নাম উঠে এসেছে বিষ্ণোই লরেন্সের। তদন্তে নেমে সব কিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্যবসায়িক শত্রুতা নাকি বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প, খুনের নেপথ্যের প্রতিটি সম্ভাবনাকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। চলতি বছরে কংগ্রেস ছেড়ে অজিত পাওয়ারের এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন সিদ্দিকি। সর্বক্ষণ পুলিশি নিরাপত্তা পেতেন। তারপরেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল। তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে সিদ্দিকি খুনের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিদ্দিকি খুনের পর বিষ্ণোই গ্যাংয়ের যোগ স্বীকার করে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়। এরপর সলমন খানের বাড়িতে বাড়ান হয় নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয় মুম্বই পুলিশ। উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে মুম্বইয়ে এমন বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা খুন হননি। ওই দশকেরে শুরুর দিকে বিজেপির তৎকালীন দুই বিধায়ক রামদাস নায়েক এবং প্রেমকুমার শর্মাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। শিবসেনার দুই নেতা বিঠঠল চহ্বান এবং রমেশ মোরে ওই সময় খুন হন।