সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- বাসের বেপরোয়াতার জন্য বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা। এমনই সমীক্ষায় উঠে এসেছে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের। প্রায় ৩৫-৩৬ শতাংশ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী বাসের বেপরোয়াতা। ২০২৩ ও ২০২৪ সাল মিলিয়ে দেখা গেছে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু সংখ্যা ৩৫-৩৬ শতাংশ। বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু রোখা গেলে ২০০ জনের মধ্যে ৭০ জনকে বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছে ট্রাফিক বিভাগ। সমীক্ষায় দেখা গেছে সকাল ৮টা থেকে ১২ টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে পথ দুর্ঘটনা সব থেকে বেশি হয়। এছাড়াও দেখা গেছে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারী, মার্চ মাসে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কম হয়। এই সময় দুর্ঘটনা বেশি হয়। পাশাপাশি জুন জুলাই এবং অগাস্ট মাসে বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এর ফলেও এই সময় দুর্ঘটনা বেশি হয় বলে জানা যাচ্ছে। কলকাতায় ৭ শতাংশের কম রয়েছে গাড়ি চলাচলের রাস্তা। ফলে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেলেও রাস্তার পরিমাণ একই রয়েছে। ২০১৫ সালে গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩১.২ লক্ষ, ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫.৭ শতাংশ। দুর্ঘটনার এই সমস্ত কারণ গুলিও ছাড়াও রয়েছে বাস চালকের গাফিলতি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন বাস চালককে পাওয়া যাচ্ছে যাঁরা মদ্যপ অবস্থায় বাস চালাচ্ছে বলে ট্রাফিক সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাসের রেষারেষিও পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে দাবি পুলিশের।
বাস দুর্ঘটনা নিয়ে বাস মালিক সংগঠনদের সচেতন করতে মঙ্গলবার কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ ও বাস মালিক সংগঠনগুলির সমন্বয় বৈঠক হয়। বছরের প্রথম বৈঠক এটি। আগামীতে এই রকম বৈঠক প্রতি ট্রাফিক গার্ড এলাকায় করা হবে। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিসি ট্রাফিক ইয়েলওয়াড় শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও, ডিসি ট্রাফিক (সাউথ) অমিত কুমার সাউ, বাস মালিক সংগঠনগুলো এবং ট্রাফিক বিভাগের অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা। এদিনের বৈঠকে বাস মালিকদের বাস চালকদের নিয়ে সচেতন করার বার্তা দেওয়া হয় পুলিশের তরফ থেকে। বাস চালকদের দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি পরিবহন দফতরের নিয়ম মেনে বাস চালাতে হবে এমনটাও বলা হয় বাস মালিক সংগঠনগুলিকে। বাস চালকের বিরুদ্ধে পূর্বে কোনও দুর্ঘটনার ঘটনা রয়েছে কিনা বা কোনও অপরাধমূলক অভিযোগ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে চালকের হাতে বাস দেওয়ার কথা বলা হয় ট্রাফিক বিভাগের তরফ থেকে। প্রতি নিয়ত বাস মালিকের তরফ থেকে দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতন করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। প্রয়োজনে ক্যাম্প করানো হবে বাস চালকদের এমনও জানানো হয়। বাস চালকরা মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছে কিনা তা নজর দিতে বলা হয় বাস মালিকদের। প্রয়োজনে পুলিশ সাহায্য করবে তাও বলা হয়। যদিও বাস মালিক সংগঠনগুলির দাবি পুলিশ দেখলে বাস চালকরা আতঙ্কিত বোধ করেন। পুলিশের অনৈতিক ট্রাফিক কেস দেয় এমন অভিযোগ তাদের। রাস্তার পাশে পার্কিং থাকায় বাস দুর্ঘটনা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা। বাস চালকদের সঙ্গে পুলিশের সংযোগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাস মালিকরা। বাস চালকদের সচেতনতা সময় সাপেক্ষের বিষয়। এনিয়ে বাস মালিকদের নজর দিতে হবে, বলে জানান কলকাতা ট্রাফিক বিভাগের ডেপুটি কমিশনার ইয়েলওয়াড় শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও। অন্যদিকে সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটো সাহার দাবি, চালকদের সঙ্গে ক্যাম্প বা ওয়ার্কশপ করা প্রয়োজন পুলিশের। সংযোগ না বাড়ালে পুলিশের প্রতি আতঙ্কথেকে যাবে বাস চালকদের। প্রতি বছরের প্রতিটি পথ দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য দায়ী বাস চালকরাই। ট্রাফিকের তরফ থেকে করা বাস মালিক বা বাস চালকদের নিয়ে করা ওয়ার্কশপে কি আদৌ মৃত্যু হার কমবে তাই এখন দেখার!