সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিকঃ শুরু হয়েছে ২০২৫ এর আইপিএল। বুকিরাও হয়ে উঠেছে বেটিং নিয়ে সক্রিয়। তবে নজরে রেখেছে প্রশাসনও। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও অনলাইন বেটিং বা গ্যাম্বলিং রুখতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। রেল এবং ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, সরকারের নীতিগুলির লক্ষ্য সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ, বিশ্বস্ত এবং জবাবদিহিমূলক ইন্টারনেট তৈরি করা। ইতিমধ্যেই লোকসভায় তিনি বলেছেন, রাজ্য-কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রয়াসে অনলাইন বেটিং বা গ্যাম্বলিংয়ের উপর রাশ টানা সম্ভব হয়েছে। ২০২২ এ যেখানে ১৪ টি বেটিং ওয়েবসাইট ব্যান করা হয়েছিল। সেখানে ২০২৪ এর মধ্যে ১০৯৭ টি বেটিং ওয়েবসাইট ব্যান করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে ব্যান করা বেটিং ওয়েবসাইট এর সংখ্যাটা উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই আশাবাদী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সংসদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই অনলাইন গেমিং নিয়ে আসক্তির কথা বলেন এবং এর ক্ষতিকর দিকের কথা যে সরকারের জানা তাও উল্লেখ করেন। ২০২১ সালে দেশের তথ্য প্রযুক্তি আইনে নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে। আর সেখানে গেমিং সংস্থাগুলির দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করা রয়েছে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে অনলাইন গেমিংয়ের বাজার মূল্য প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৯ সালের মধ্যে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়াবে ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালে মহাদেব গেমিং অ্যাপ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরই সরকার এই বিষয়ে আরও সতর্ক হয়ে ওঠে। ওই অ্যাপের মাধ্যমে ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, পোকারের মতো খেলায় জুয়া চলত, এমনকি দিনে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের তথ্যও উঠে এসেছিল। ভারতে অনলাইন বেটিং ও গ্যাম্বলিং আইনত নিষিদ্ধ হলেও, অনেক ওয়েবসাইট বিদেশ থেকে পরিচালিত হত। এগুলো সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা প্রচার করা হতো এবং লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা হত। উদাহরণস্বরূপ, মহাদেব অ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সমাজ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন চালাত। এছাড়া, এই ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে টাকা লেনদেনের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বা মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছিল, যা ট্র্যাক করা কঠিন। সরকার এই সব দিক বিবেচনা করেই কঠোর হস্তে দমনের পথ বেছে নিয়েছে। ২০২৪ এর একটি সমীক্ষায় উঠে আসে, ভারতের শহরাঞ্চলে থাকা ৬৬ শতাংশ শিশু-কিশোরই অনলাইন গেমিংয়ে আসক্তির শিকার। এই বিশাল ব্যবসার একটি বড় অংশই বেটিং ও জুয়ার মাধ্যমে চলছিল, যা বর্তমানে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে বন্ধের পথে। অনলাইন বেটিং নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র। প্রশ্ন থাকছে, গেমিং শিল্পের ক্ষতি হবে না তো! তবে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট, তারা শুধু বেআইনি বেটিং ও জুয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বৈধ গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। অনলাইন বেটিং সাইটগুলো শুধু জুয়ার মাধ্যমেই নয়, বরং ডেটা চুরি, ফিশিংয়ের মতো অপরাধেরও হাতিয়ার হয়ে ওঠে। অনেক সময় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে দেওয়া হত। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা তাই সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধেও একটি বড় পদক্ষেপ।