মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এই খবরে উদ্বেগ বাড়ছিল। এরইমধ্যে গুঞ্জন পড়তে পারে ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠছে সেনাবাহিনী। এই পরিস্থিতিতে ইউনুস সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে সোমবার গোপন বৈঠকও হয়েছে। ফলে আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোয়, তা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। সোমবার রাতে ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে যে বৈঠক হয়, তাতে পাঁচ লেফটেন্যান্ট জেনারেল, আট মেজর জেনারেল, স্বাধীন ব্রিগেডের কম্যান্ডিং অফিসার থেকে সদর দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন বলে খবর।
ঢাকা সূত্রে খবর, সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনের জেরে গতবছর হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছিল। তারপরই বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন মহম্মদ ইউনুস। কিন্তু তাঁর শাসনকালে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর প্রবল অত্যাচার শুরু হয়েছে, গোল্লায় গেছে আইনশৃঙ্খলা। এইসব নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন মহম্মদ ইউনুস। তাঁর সরকারের উপর থেকে ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছেন মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রপতির উপর চাপসৃষ্টি করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করাতে পারে। ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানও ঘটানো হতে পারে। তবে কি পাকিস্তানের মতো সেনার তত্ত্বাবধানে চলে যাবে বাংলাদেশ? ঠিক যেমন হাসিনার দেশত্যাগের পর হয়েছিল?
জাতীয় ঐক্য সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, মত কূটনীতিকদের একাংশের। ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাডে় সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার চালানোয় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন মহম্মদ ইউনুস। দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু-খ্রিস্টানদের উপর অত্যাচার, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারাটা সরকারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কি আবারও দেশের হাল ধরবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, প্রশ্ন উঠছেই।গত কয়েকদিন যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে এই ইঙ্গিতই মিলছে। এই আবহে সোমবার ঢাকায় সেনানিবাস প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ় জ়ামান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনা সূত্রে খবর, বাংলাদেশে ভুল তথ্য এবং গুজব ছড়ানোর বিষয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন সেনাপ্রধান। এই পরিস্থিতিতে সেনাকর্তাদের ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে হবে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই শীর্ষনেতার মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কয়েকজন নেতাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ‘চাপ দিয়েছে’ সেনা। যদিও সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে চাননি দলের আর এক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, সেনার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ঢাকার রাজনৈতির মহলে আলোচনা চলছে।
গত জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের প্রথম সারিতে যেসব ছাত্ররা ছিলেন, তাদের নিয়েই তৈরি হয়েছে এনসিপি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যখন অন্তবর্তী সরকার গঠন হল, তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে সেনার সমন্বয় ধরা পড়েছিল। কিন্তু পরে দু’পক্ষের মধ্যে দূরত্ব প্রকাশ্যে আসে। এই পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ। তবে আবারও কি দেশের হাত ধরবে সেনাবাহিনী, তবে কি ইউনুস সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল, প্রশ্ন উঠছেই।