পহেলগাঁও এ জঙ্গি হামলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তানের উপর পাঁচ পাঁচটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (Surgical Strike) এর ঘোষণা করেছে ভারত। যে ঘোষণায় প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে সে দেশের সরকার। বাকি চারটি স্ট্রাইক নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না হলেও, পাকিস্তান খুব ভালো ভাবেই জানে যে ভারতের ঘোষিত এক নম্বর স্ট্রাইক সে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ কে আঘাত না করেই মেরে ফেলতে পারে। আর যে স্ট্রাইকের আনুষ্ঠানিক চিঠি বৃহস্পতিবারই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ২০১৬ সালের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল অতর্কিতে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা। যে কাজ খুব সফলভাবে করেছিলো ভারতীয় সেনা। তারপরেও শিক্ষা হয় নি পাকিস্তানের। সারা বিশ্বের কাছে জঙ্গিদের আঁতুর ঘর বলে পরিচিত এই দেশটি সেই সার্জিক্যাল অ্যাটাকের পর কিছুটা থমকে গেলেও চোরাগোপ্তা সীমান্ত পার সন্ত্রাস (Cross Border Terrorism) চালিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। ২০১৬-র পর ২০১৯ এ বড়সড় হামলা হয় পুলওয়ামায়। তবে এবার গত ২২ (এপ্রিল) তারিখ যে ধরনের জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে তা স্মরণাতীত কালে ঘটেনি। একেবারে নিরীহ, নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর হামলা ও বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের খুন করা, এটা আগে কখনও কাশ্মীর ভ্যালিতে হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না অনেক বিশেষজ্ঞই। এই ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ক্ষোভ উগরে পড়ছে সাধারণ ভারতবাসীর। কড়া পদক্ষেপের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র সরকারও। আর এই কড়া পদক্ষেপ কে বলা হচ্ছে কূটনৈতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (Diplomatic Surgical Strike)।
ভারত সরকার প্রাথমিকভাবে যে পাঁচ পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রথমটি হলো সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করা। বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রকের সচিব সৈয়দ আলী মূর্তজা কে চিঠি দিয়ে কড়া ভাষায় সেকথা জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের জলশক্তি মন্ত্রকের সচিব দেবশ্রী মুখার্জির সহি সম্বলিত যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেখানে পরিষ্কার করেই পহেলগাঁও এ জঙ্গি হামলা সহ একাধিক সীমান্ত পার সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জলচুক্তি স্থগিতের কারণ হিসাবে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘যেকোনও চুক্তির ভিত্তি হলো সেই চুক্তিকে সম্মান জানানো। কিন্তু আমরা দেখেছি যে পাকিস্তানের তরফে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ চালানো হয়েছে। বারবার বার্তা দেওয়ার পরেও পাকিস্তান সীমান্ত পার সন্ত্রাস বন্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি যা এই চুক্তির শর্ত কে লঙ্ঘন করেছে। ফলে দেশের (ভারতের) নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন ছাড়াও, পাকিস্তান চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধেও কোন উত্তর না দিয়ে এই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তাই ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে।’
ভারতের এই সিদ্ধান্তে (সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত) পাকিস্তান যে বিষম বিপদে পড়তে চলছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ এই চুক্তি বাতিল করার ফলে পাকিস্তানের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকার চাষবাস লাটে উঠবে। শুধু তাই নয়, মুলতান লাহোর থেকে শুরু করে ওই দেশের একটা বড় অংশের মানুষ পানীয় জল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। এমনিতেই পাকিস্তানের আর্থিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, তার উপর ভারতের মাটিতে উৎপন্ন হওয়া পশ্চিম বাহিনী তিন নদী সিন্ধু (Indus River), চেনাব (Chenab River) ও ঝিলাম Jhelam(River) এর জল বন্ধ হয়ে গেলে আখেরে না খেতে পেয়ে মরতে হবে পাকিস্তানকে। ভারত সরকার পাকিস্তানের উপর কোনো সামরিক আঘাত (আপাতভাবে সেই সম্ভবনা ক্ষীণ) এই মুহূর্তে না হানলেও, যে কূটনৈতিক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছে তাও পাকিস্তানের সরকারকে যে ঘরে বাইরে প্রবল চাপে ফেলেছে তা বলাই যায়।