পহেলগাঁও এ পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনা যেন ভিত নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে কাশ্মীরবাসীর। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রাস্তায় নেমে এসেছে। সেই ক্ষোভের রেশ ধরা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার গলাতেও।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- এর আগে অনেক সন্ত্রাস দেখেছে কাশ্মীর। সেনাবাহিনীর উপর হামলা থেকে শুরু করে সীমান্ত সংঘর্ষ এমনকি যুদ্ধ। কখনও বা দুই একজন পর্যটককে চোরাগোপ্তা খুন করা বা মুক্তিপণের জন্য আটক করে রাখা। কিন্তু এক জায়গায়, এক সঙ্গে এতজন নিরীহ, নিরস্ত্র পর্যটককে গুলি করে খুন করা, বিশেষ করে তাদের ধর্ম জেনে নিয়ে বেছে বেছে গুলি করা, না, সাধারণ কাশ্মীর বাসী এমন ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না। যে পর্যটকরা কাশ্মীরবাসীর জীবন জীবিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাদের উপর এই ধরনের আক্রমণ আসলে তাদের (কাশ্মীরবাসীর) উপর আক্রমণ বলেই মনে করছেন তারা। তাই তো ২২ (এপ্রিল) তারিখ সন্ধ্যা থেকেই শুধু পহেলগাঁও নয়, সারা কাশ্মীর জুড়েই পথে নেমেছেন হাজার হাজার কাশ্মীরি যুব সমাজ।
এতদিন যে কাশ্মীরী যুবক ভারতীয় সেনার দিকে পাথর ছুঁড়তো, তারাই এখন পাকিস্তান মূর্দাবাদ, ভারত জিন্দাবাদ শ্লোগান দিচ্ছে। কাশ্মিরী যুব সমাজের সঙ্গে সাধারণ কাশ্মীরবাসীর মনোভাব বুঝতে পারছেন ওখানকার রাজনৈতিক নেতারাও। সোমবার জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার গলাতেও ফুটে উঠল সেই ক্ষোভের রেশ।
এদিন ন্যাশানাল কনফারেন্স নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেন, “আজ দেশের প্রতিটি কোনা, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, এই নারকীয় জঘন্য ঘটনায় স্তম্ভিত। পুরো কাশ্মীর এই ঘটনার (পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা) তীব্র বিরোধ করছে এবং এই হামলা হলো সন্ত্রাসের শেষের শুরু।” তিনি বলেন, “যখন আমি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে গিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলাম, তখন তাদের পরিবারের সদস্যদের কিছু কথা বলার ভাষাও আমার ছিলো না। কি বলতাম তাঁদের আমি ?” জম্মু কাশ্মীরের নিরাপত্তার বিষয়টা তাঁদের (রাজ্য সরকারের) হাতে নেই জানিয়ে ওমর আবদুল্লা আরো বলেন, “একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, একজন পর্যটন মন্ত্রী হিসাবে, আমিই তো তাঁদের (পর্যটকদের) আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছিলাম। আমার দ্বায়িত্ব ছিলো সম্পূর্ণ নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফেরৎ পাঠানো। সেটা আমি পারি নি। আমার কাছে কোনো শব্দ নেই উত্তর দেওয়ার। ওই ছোটো বাচ্চাগুলো (যাদের বাবা মারা গিয়েছে) কে কি বলবো আমি যারা তাদের বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখেছে, কি উত্তর দেবো ওই নেভি অফিসারের বিধবা স্ত্রী কে যাঁরা কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছিলেন। আমার সত্যিই কিছু বলার নেই।” দৃশ্যতই তখন যথেষ্ট ভাবগম্ভীর লাগছিলো জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে।