যে মুনমুন সেন অনেক দিন পর স্ক্রিনে ফেরত এসে দর্শকের মন আবারও কেড়ে নেওয়ার মত কাজ করেছেন। পরিচালক প্রিয়দর্শী ব্যানার্জী তরুণ হয়েও ছবির গল্পে ও পরিচালনায় প্রমাণ করেছেন আগামী দিনে বড় পরিচালক হওয়ার অনেক গুণ রয়েছে তাঁর। ছবির নান্দনিক কাটাছেঁড়া করারা পরেও উল্লেখযোগ্য বিষয় এই সময়ে প্রবীণ নাগরিকদের অসহায়তাকে বাংলার মুঠোফোনে তুলে ধরার এই প্রচেষ্টার জন্য চোরকাঁকা প্রডাকশন ও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার প্রিয়দর্শী ব্যানার্জী প্রশংসার যোগ্য।
চক্রয়ুত ঘোষ, সাংবাদিক- মুনমুন সেন নামটির মধ্যে ‘সেন’ পদবিটির একটি বিশেষ গুরুত্ব থাকলেও কোনোদিনও তা মুনমুন সেনের অভিনেতা সত্বাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। সুচিত্রা সেনের কন্যা হওয়া সত্ত্বেও উনি নিজের স্ক্রিন প্রেজেন্স দিয়ে, নিজের আলাদা একটা পরিচয় গড়ে তুলতে শুধু সক্ষম হন নি, নিজের একটি বিশাল ফ্যান ফলোয়িং তৈরী করেছিলেন। সম্প্রতি কালে “কপিল শর্মা শো” তে অর্চনা পুরাণ সিংহ বলেছিলেন যে “শ্রীমন শ্রীমতি” টিভি শো তে তিনি তার চরিত্র টি, মুনমুন সেনের কথা বলার আদলে গড়ে ছিলেন। তার অনেক দিন পর ২৬ এপ্রিল ২০২৫ সেই মুনমুন সেনের অভিনিত একটি সিনেমা মুক্তি পেল। তবে এই ছবি বড় পর্দার জন্যে নয়। এটি কোনো সিরিজও না। এটি একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যর ছবি, যার নাম ‘সহচরী’। তার সাথে সহভিনেতা হিসাবে কাজ করেছেন নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুস্মিতা চ্যাটার্জী। কেমন হলো এই ছবিটি ?
গল্পটি শুরু হয় মুনমুন সেনের চরিত্রটি একা একটি ঘরে বসে কিছু নতুন ফুল, ফুলদানিতে রাখার চেষ্টা করছেন। তার রংহীন জীবনের মধ্যে কিছু রং ঢালার প্রতিচ্ছবি হিসাবে দেখা গেল গুরুত্বপূর্ণ ওপেনিং শটটিতে। তারপর সুস্মিতা চ্যাটার্জীর চরিত্রটি গল্পে প্রবেশ করেন। এরপর শুরু হয়ে তাদের মধ্যে কথাপকথন, এবং একের পর এক অতি শক্তিশালি কিছু সংলাপের আদান প্রদান। গল্পের গতি এবং শিল্প গুণ নিয়ে আলোচনা করার আগে, এটা উল্লেখ করা উচিত যে মুনমুন সেনের অভিনয় এবং ওনার ব্যক্তিত্ব এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফিল্মটির জান। এটি বললে ভুল হবে না, যদি বলি যে ফিল্মটির অনেক দুর্বলতা, ফাঁক-ফোকর তাঁর জন্য ঢাকা পরে গেছে।
পরিচালক প্রিয়দর্শী ব্যানার্জী-র চিত্রনাট্য বেশ কিছু ভালো সংলাপে ভর্তি হলেও গল্পের গতি একটি সময় মনে হয়ে বেশ ধীর। একটি দৃশ্য মিনিটের পর মিনিট ধরে চলেই যাচ্ছে, যা মূল গল্পের বাঁধুনিকে দুর্বল করেছে। তাই সংলাপ শুরুতে মন কাড়লেও শেষের দিকে মনে হয়ে যেন বেশ একঘেয়ে। সিনেমাটিতে বেশ কিছু দৃশ্যের কম্পোজিশন নিয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার অবকাশ আছে। নতুন প্রজন্মের দর্শকদের ধরে রাখতে গল্পের প্লটের সঙ্গে অভিনব দৃশ্যের এই বোঝাপড়া আরও মজবুত থাকলে ফিল্মের শেষ অভিঘাতটি আরও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠতে পারতো।
যদি অভিনয়র কথা বলতে হয়ে তাহলে মুনমুন সেনের কাজ নিয়ে এই রিভিউর প্রথম দিকেই উল্লেখ করা হয়েছে। রইলো বাকি সুস্মিতা চ্যাটার্জী, যার অভিনয় এই ফিল্মে বিশেষ নজর কাড়ে নি। বাংলা উচ্চারণে জড়তা ও সহভিনেতার সঙ্গে সংলাপের বোঝাপড়া এই ছবিকে আরও বলিষ্ঠ করে তুলতে পারতো।
ফিল্মটিতে ক্যামেরা প্রয়োগ ভালো তবে শুরুর দিকে লাইটের ব্যবহার বেশ দুর্বল। লাইটের কড়া ব্যবহার অভিনেতাদের ছায়া দেওয়ালে ফেলে, যা পেশাদারী কাজকে প্রশ্ন তুলতে পারে। তবে ছবি যত এগোতে থাকে ঠিক সেভাবেই ফ্রেম গুলি একটু একটু করে সুন্দর হতে থাকে। ছবিটির টেকনিকাল দিক থেকে সর্বাপেক্ষা প্রশংসনীয় দিক এডিটিং। ভালো এডিটিং ঠিক যে ভাবে গল্পের দুর্বল দিক গুলি ঢেকে দেয় এখানেও সেই মানের এডিটিং ছবিটিকে বিশেষ মাত্রায় নিয়ে গেছে।
সব শেষে যেটা না বললেই হবে না তা হল যে মুনমুন সেন অনেক দিন পর স্ক্রিনে ফেরত এসে দর্শকের মন আবারও কেড়ে নেওয়ার মত কাজ করেছেন। পরিচালক প্রিয়দর্শী ব্যানার্জী তরুণ হয়েও ছবির গল্পে ও পরিচালনায় প্রমাণ করেছেন আগামী দিনে বড় পরিচালক হওয়ার অনেক গুণ রয়েছে তাঁর। ছবির নান্দনিক কাটাছেঁড়া করারা পরেও উল্লেখযোগ্য বিষয় এই সময়ে প্রবীণ নাগরিকদের অসহায়তাকে বাংলার মুঠোফোনে তুলে ধরার এই প্রচেষ্টার জন্য চোরকাঁটা প্রডাকশন ও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার প্রিয়দর্শী ব্যানার্জী প্রশংসার যোগ্য। তাঁদের ভবিষ্যতের কাজের জন্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।