ঘটনার অন্তত ৭ দিন আগে ১৫ই এপ্রিল কাশ্মীর পৌছয় জঙ্গিরা বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সেই দিন থেকে নিজেদের “মিশন” নিয়ে রেইকি করা শুরু করে জঙ্গিরা। শুধুমাত্র বৈসরণ উপত্যকা নয়, জঙ্গিদের প্ল্যান “বি”-ও সেট করা ছিল। পহেলগাঁওয়ের পর্যটনক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, বৈসরণ ও চন্দরওয়াড়ি এলাকায় রেইকি করে জঙ্গিরা।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- ২২ শে এপ্রিলের দুপুরটা এখনও ভুলতে পারেনি দেশবাসী। ওইদিন সকাল থেকেই পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ উপত্যকা ছিল পর্যটকদের আনন্দ উচ্ছাসে বর্ণময়। এসবের মাঝে হঠাৎই গুলির শব্দে গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে বৈসরন। প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারে পালানোর চেষ্টা করে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয় ২৬ জনের। উত্তাল হয় সারা দেশ। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করে ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। তদন্তে উঠে আসে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। বৈসরণ উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনী না থাকায়, ওই এলাকাকে টার্গেট করে জঙ্গিরা।
ঘটনার অন্তত ৭ দিন আগে ১৫ই এপ্রিল কাশ্মীর পৌছয় জঙ্গিরা বলে দাবি গোয়েন্দাদের। সেই দিন থেকে নিজেদের “মিশন” নিয়ে রেইকি করা শুরু করে জঙ্গিরা। শুধুমাত্র বৈসরণ উপত্যকা নয়, জঙ্গিদের প্ল্যান “বি”-ও সেট করা ছিল। পহেলগাঁওয়ের পর্যটনক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরু ভ্যালি, বেতাব ভ্যালি, বৈসরণ ও চন্দরওয়াড়ি এলাকায় রেইকি করে জঙ্গিরা। বৈসরণ যেতে গেলে একটা দিন সময় লাগে, একসঙ্গে অনেক পর্যটক ও স্থানীয়দের পাওয়া যায় ওই এলাকায় পাশাপাশি সেনারাও উপত্যকার উপরে থাকে না। এইদিক গুলোই জঙ্গিদের হামলা করার জন্য আদর্শ বলে মনে হয়, তুলনায় আরু এবং বেতাব ভ্যালিতে কঠোর নিরাপত্তা থাকে, পর্যটকও যায় কম। সুতরাং ওই এই এলাকাগুলিতে হামলা করলে পালানো সম্ভব না হতেও পারে। যদিও তাদের হামলা করার জন্য প্রথম পছন্দ ছিল আরু বা বেতাব ভ্যালি। ফলে রেইকি করে টার্গেটের তালিকা থেকে এই দুই জায়গাকে বাতিল করে তারা। একটি বিনোদন পার্ককেও বেছে নেওয়া হয়েছিল হামলার জন্য বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। তবে সেখানেও একই সমস্যা। কঠোর নিরাপত্তা ছিল ওই পার্কে। তাই সেটিও বাদ দেওয়া হয় তালিকা থেকে। বৈসরণের দুর্গম পথ, পর্যটকদের ক্ষেত্রে পালিয়ে যাওয়া কঠিন, এরকম একাধিক বিষয় তাদের নজরে পড়ে। সব দিক দেখে তারা অবশেষে হামলা চালানোর জন্য বৈসরণকে বেছে নেয়।
এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য করার জন্য জন্য প্রায় ২০ জনের ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কাস বা OGW-র একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল। এই নেটওয়ার্কের কয়েকজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের উপরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পহেলগাঁও পৌছেছেন এআইএ-র ডিজি। এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। ২০ জন OGW-র মধ্যে ৪ জন ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কাস এই হামলার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে সরাসরি সাহায্য করেছে বলে এনআইএ রিপোর্টে জানা যাচ্ছে। তাদের মাধ্যমেই মূলত জঙ্গিরা রেইকি এবং লজিস্টিক সাপোর্ট পেয়েছিল। হামলার আগে ৩টি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে ২ টি ফোনের সিগন্যাল ট্রেস করা গেছে। হামলার ঘটনায় সরাসরি নাম জড়িয়েছে লস্কর-ই-তৈবার। এই হামলার পর থেকে পাকিস্তানের তরফে হাফিজ সইদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে জানাচ্ছে গোয়েন্দারা। ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র বাহিনী রাখা হয়েছে তার বাড়ির বাইরে। সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে বাড়ির এলাকা। লাহোরের বাড়িতে সর্বক্ষণ নজর রেখেছে পাক প্রশাসন। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও পাক সেনাও যোগ দিয়েছে নজরদারিতে।