চক্রযুদ্ধ ঘোষ, সাংবাদিক – অভীক সরকারের ‘ভোগ’- এর অবলম্বনে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভোগ’ সিরিজ টি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মায়ের ভোগ, পর্দায় দর্শন করে কি পূণ্য লাভ হলো? নাকি ভুলভ্রান্তির ভিড়ে দর্শনটি হলোনা মনের মতো।
সানডে সাসপেন্সর দৌলতে বিখ্যাত হওয়া ‘ভোগ’ গল্পটির ‘অতীন’ আর hoichoi-এর সিরিজের ‘অতীন’ চরিত্রটির মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। শান্তনু মিত্র নিয়োগী-র চিত্রনাট্য তে, তাকে একজন lady’s man হিসাবে দেখানো হয়েছে, পরিচালকের এই সিদ্ধান্ত টি বেশ প্রশংসনীয়, কিন্তু তার এই চরিত্রটিকে পর্দায় গড়ে তোলার সময় চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে কোনো পরিশ্রম লক্ষ্য করা যায় না। আপনাদেরকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি – অতীনের মা মারা গেছেন (spoiler), আর তার আত্মা আমরা ঠিক দুই – থেকে তিন বার সিরিজে দেখি, কিন্তু তিনি কেমন ছিলেন? তার মৃত্যু কেন হয়? তার আত্মা আমরা কেন দেখতে পাচ্ছি? কিছুই আমরা জানি না। পুষ্প দি, যিনি অতীনের সাথে থাকেন, তিনি ঠিক কিরকম ব্যক্তি? তিনি একটি আংটির খাতিরে অতীনের দায়িত্ব তার মার থেকে গ্রহণ করেন, কিন্তু ডামরি যখন অসহায় অবস্থায় বাড়ি আসে, এবং তার আর্থিক ভাবে ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি শোনার পরেও তাকে বাড়িতে আশ্রয় দিতে তার আপত্তির দিক টি, এটির অর্থ স্পষ্ট নয়। এতো গুলো character inconsistency- তে ভর্তি স্ক্রিপ্ট, যেটির মধ্যে একাধিক বিষয় পরিচালক সফল ভাবে দেখাতে পারেননি।
কোনো সিরিজের গতি সেই সিরিজটির চিত্রনাট্যকেও প্রভাবিত করে। সাধারণত আমরা ভাবি, যে কোনো গল্পের গতি কম হলে সেই গল্পটি ‘boring’ হয়। কিন্তু এই সিরিজটির ক্ষেত্রে এটির দূর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝড়ের বেগে ছোটার গতি। এই বিষয়টি সিরিজটির প্রচুর বড়ো ক্ষতি করে দেয়। গল্পের গতি এতোটাই তীব্র, যে পরিচালক অনেক কিছু বোঝাতে অক্ষম আর অনেক দিক থেকে বেশ কিছু “closure” দিতেও পরিচালক অসফল। (Spoiler alert) অতীনের বাড়িতে বাদ বাকি আত্মা গুলি, যারা মাঝে মধ্যে ঘুরে ঘুরে দর্শক দের দেখা দিচ্ছিলো, তারা কারা? বাড়ির পেছনে মরা পাখির রক্ত দিয়ে আঁকা গুলি কিভাবে এলো এবং ওগুলির গল্পে ঠিক কি গুরুত্ব আছে? পুরো পরিবার যখন বাড়ি ছেড়ে দিলো, তখন দেবীর মূর্তি পন্ডিতজি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন না কেন? তা না করে তিনি ওটা একটি art dealer কে কেন দিয়ে দিলেন? অতীনের গাড়ি যদি খারাপ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেটি এতো নিঁখুতভাবে কি করে রাস্তার ধারে চলে এলো? এরকম প্রচুর যুক্তিসম্পন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দর্শকরা।
তবে শুধু নেতিবাচক সমালোচনা করলে এটির যে ভালো দিক গুলো আছে, সেগুলো ঢাকা পরে যাবে। এটির cinematography তে বাসুদেব চক্রবর্তী বেশ ভালো। তার লাইটের ব্যবহার, close up এর তীক্ষ্ণ framing, এবং কিছু ‘jump scare’ এর দৃশ্য silhoutte শট গুলি বেশ আর্কষনীয়। তবে গল্পের শেষের দিকে দুর্বল cgi এবং vfx তার পুরো খাটনি টিকে প্রায় অসফল করে দেয়। সিরিজটি তে অনির্বান ভট্টাচার্যের অভিনয়ের কোনো খামতি তুলে ধরা যাবে না। সে যে একজন ‘জাত অভিনেতা’, সেটি সে প্রমান করে দেয়। একটি দুর্বল screenplay কে যে অভিনয় দক্ষতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়, সেটি তিনি প্রমান করে দিয়েছেন। পার্ণ মিত্রের অভিনয়ের মধ্যে সাবলীলতার অভাব। তার জায়গায় অন্য কোনো অভিনেতাও বেশ ভালোই অভিনয় করতো। কোনো সময় তাকে পর্দায় comfortable লাগেনি। রজতভ দত্তের অভিনয়ের মধ্যেও নতুনত্বের অভাব। সে আর পাঁচটা ফিল্মে যেরকম অভিনয় করেন, এখানেও তেমনই করেছেন। তার অভিনয় করার কোনো জায়গা ছিল না, কারণ মূল গল্পে তার চরিত্রটি বড্ড একঘেয়ে। সিরিজ-টির আর্ট-এর দিক টিতে কাজ বেশ ভালো। অতীনের চরিত্রর বাড়ি টি বেশ ভালো ভাবে atmospheric ব্যাপারটি তুলে ধরতে সফল হয় এবং গল্পের essence টিকে বজায় রাখে।
সব শেষে একটা কথা মাথায় রেখে এই সিরিজ টি দেখতে বসবেন। এটি কিন্তু কোনো audio ড্রামা নয়। এটি একটি অডিও ভিজ্যুয়াল অ্যাডাপটেশন্। পর্দার কিছু শর্ত থাকে এবং সেটির আঁধারে Hoichoi-এর ভোগ টেকনিক্যালি কিছু আশার আলো দেখালেও এটি খুব উন্নত মানের সিরিজ নয়। ১লা মে Hoichoi তে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। শ্রুতিমাধ্যম নাকি ছোটপর্দা “ভোগ” বেশি সফল কোথায়? আপনাদের মতামত ভাগ করে নিন আমাদের সাথে।