দীঘার জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন হয়েছে এখনও এক সপ্তাহ হয় নি। এর মধ্যেই একের পর এক বিতর্ক সামনে এসেছে। এই মন্দিরের সঙ্গে ‘ধাম’ শব্দ নিয়ে বিতর্কের মাঝেই মন্দিরে অধিষ্ঠিত জগন্নাথ দেবের মূর্তির কাঠ (‘দারু ব্রহ্ম’) নিয়ে আরো একটি বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনকি এই বিতর্কের জেরে উড়িষ্যা সরকারের পক্ষ থেকে পুরীর মন্দির কমিটিকে তদন্ত করার নির্দেশ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। সোমবার সেই বিতর্ক নিয়েই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- সদ্য উদ্বোধন হওয়া দীঘার ‘জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার’ ইতিমধ্যেই রাজ্যের মানুষের কাছে এক অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান হয়ে উঠেছে। এই কয়দিনে কয়েক লক্ষ মানুষ এই মন্দির দর্শন করেছেন, পুজো দিয়েছেন। মন্দিরের জনপ্রিয়তা যেভাবে বেড়েছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিতর্ক। মন্দির উদ্বোধনের সময় দিঘায় উপস্থিত থেকে পুরীর জগন্নাথ ধামের দয়িতাপতি সংগঠনের সম্পাদক রাজেশ দয়িতাপতির একটা মন্তব্যই বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সত্যিই কি পুরীর মন্দিরের মূর্তির নিম কাঠ দিয়েই দীঘার জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরি হয়েছে ? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন পুরীর মন্দিরের মূর্তির নিম কাঠ চুরি করে দীঘার জগন্নাথ মুর্তি তৈরি করা হয়েছে। সোমবার মুর্শিদাবাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বলা হচ্ছে আমি নাকি নিম গাছ চুরি করেছি। আরে আমার বাড়িতে তো চারটে নিমগাছ রয়েছে।” বেশ রাগত স্বরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মমতা ব্যানার্জি নাকি নিম কাঠ চুরি করে জগন্নাথ ধাম করেছে। মমতা ব্যানার্জির এই অবস্থা হয় নি। জগন্নাথ দেবের মূর্তি তো কিনতেও পাওয়া যায়। ওটা(জগন্নাথ দেবের মূর্তি) নিয়ে এসেছেন দয়িতাপতি।”
মূর্তি বিতর্কে রবিবার পুরীর জগন্নাথ মন্দির পরিচালন কমিটি একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজেশ দয়িতাপতিও। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুনলাম কালকে ওঁকে (রাজেশ দয়িতাপতি) ডাকা হয়েছিলো। তিনি স্ট্রেট বলে দিয়েছেন না, তোমরা(উড়িষ্যা সরকার বা মন্দির কমিটি) যেটা বলছো সেটা নয়। এটা (দীঘার জগন্নাথ দেবের মূর্তি) আমি নিজে অন্য জায়গা থেকে করেছি।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি শুনেছি তাঁকে নাকি প্রশ্ন করা হয়েছিলো তুমি কেন পুজো করতে গিয়েছিলে? নোটিশ দেওয়া হয়েছে কেউ (পুরীর মন্দিরের কোনো পুরোহিত) যাবেন না পুজো করতে।” এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এত গায় লাগছে কেন ? আমি পুরীতে গেলে তো আরএসএস(RSS), বিজেপি(BJP) বাঁধা দেয়, বিক্ষোভ দেখায়। লজ্জা করে না ?” পুরীর মন্দিরে বাঙালি পর্যটকই সবচেয়ে বেশি যায় এটা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, “আমরা যদি একটা জগন্নাথ ধাম বানাই, তাহলে আপনাদের এত আপত্তির কি আছে ?”