মানসিক নানান ধরনের সমস্যার মধ্যে আজকের দিনে অনেকেই মুড সুইং এর শিকার হন তবে এই মুড সুইং কখনো কখনো জটিল মানসিক রোগে পরিণত হয়, চিকিৎসকের ভাষায় যাকে বাই পোলার ডিজঅর্ডার বলা হয়। কিভাবে বুঝবেন আপনি এই রোগের শিকার ? রোগটি হলেই বা কি করবেন ? আমাদের রোজকার জীবন, সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্র, সবেতেই প্রভাব ফেলে এই মানসিক রোগ।
মৌসুমী সাহা- দুটি পর্বে হয় এই বাই পোলার ডিজঅর্ডার নামক মনোরোগ। ম্যানিক পর্ব এবং ডিপ্রেসিভ পড়বে বিভক্ত এই মনোরোগটি। ম্যানিক পর্বে রোগীর লক্ষণ -একজন ব্যক্তি অত্যন্ত মেজাজী হয়ে ওঠেন। প্রচন্ড শক্তিমান মনে করেন নিজেকে। মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন হয়, আবেগ বা ইমোশন বেড়ে যায়, আত্মসম্মান বোধ বেড়ে যায়। এক ধারণা থেকে অন্য ধারনায় খুব দ্রুত পৌঁছে যায় এরা। দ্রুত কথা বলতে শুরু করে, মনোযোগের অভাব, ঘুম কমে যায়। বেপরোয়া আচরণ, মদ্যপান বেড়ে যায়, নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা বেড়ে যায়। কোন অস্তিত্ব নেই তাকে বিশ্বাস করার প্রবণতা হয়ে থাকে ম্যানিক পর্বে।
অন্যদিকে বিষণ্ণতার পর্বে খুব দুঃখ অনুভব করা খিটখিটেভাব, শূন্যতা বোধ করা, কোন কিছুতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা বোধ করা, আত্মহত্যার ভাবনা আসা, ওজনের পরিবর্তন হওয়া, খুব ক্লান্ত বোধ করেন এই পর্বে। এই পর্বগুলি দিনের বেশিরভাগ সময় হয়, প্রতিদিন হয় এমনকি কোন কোন সময় দুই সপ্তাহ ধরেও স্থায়ী হয়। বাই পোলার টাইপ ওয়ান ডিসঅর্ডার এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা একাধিক ম্যানিক পর্বের মুখোমুখি হন। আর বাই পোলার টু তে একাধিক হাইপো ম্যানিক পর্ব এবং কমপক্ষে একটি বিষন্নতার পর্বের ইতিহাস রয়েছে কিন্তু কোন ম্যানিক পর্ব নেই ।
কিন্তু কি কারনে হয় এই বাই পোলার ডিজঅর্ডার তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও পরিবেশের প্রভাবে, পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এবং নিউরোলজিক্যাল কারণে ও হতে পারে এই মনোরোগ। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণে মানসিক আঘাত,শোক এবং কাজের চাপ, এছাড়া ও নানা কারণে হতে পারে এই মনোরোগ। কখনও ফিরে ফিরেও আসতে পারে এই রোগ। মনে রাখতে হবে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন বিভিন্ন পর্বের রোগীদের। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাও প্রয়োজন হতে পারে। এই রোগে ব্যবহৃত বেশ কিছু ওষুধ অনেকের ঘুম ঘুম ভাব বেড়ে যায়, এমনকি হজমের সমস্যাও হয়। ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, যার প্রতিও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। অ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধ চালিয়ে যেতে হয় দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায়। লাইফস্টাইল পরিবর্তনেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমের সুষম আহার, ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট। সাইকোথেরাপির প্রয়োজন দরকার হতে পারে তবে সবটাই রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসকরা নির্ধারণ করেন। মনে রাখতে হবে মনোরোগ মানেই পাগল নয়, চিকিৎসার মাধ্যমে মনোরোগী ভালো হতে পারে, সুস্থ হতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।