২০২১ এ তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর পানাগড়ে এক অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন এবার তাঁর লক্ষ্য রাজ্যে শিল্পায়ন। আর এক্ষেত্রে তিনি যে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন, জানিয়েছিলেন সেকথাও। তবে এবার আর শুধু ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প নয়, রাজ্যে ভারী শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলো রাজ্য। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে সেকথা জানিয়েও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- রাজ্যে ক্ষুদ্র ছোটো ও মাঝারি শিল্পে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়ার কারণ হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিলো যে এই ধরনের শিল্পে বিনিয়োগ কম হলেও কর্মসংস্থান হয় অনেক বেশি। অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের আর্থিক সংস্থান হয় ক্ষুদ্র ছোটো ও মাঝারি শিল্পে। তবে বুধবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে সরকারের লক্ষ যে এবার ভারী শিল্পের দিকেও বাড়ছে তা বলা যায়। বুধবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিভিন্ন কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ করা হবে। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত।” ইঙ্গিত স্পষ্ট। শালবনিতে জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানার পর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কারাখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। এরপর ইস্পাত শিল্পের মতো ভারী শিল্প রাজ্যে আসলে তা যে রাজ্যের শিল্পায়নের গতিকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরুলিয়া দুর্গাপুর পানাগড় সহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে যে দশটা প্লট বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে তার মোট জমির পরিমাণ ২,৫১৫ একর। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এইসব জায়গায় মোট ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষের।
তবে শুধু ভারী শিল্প নয়, ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্যও বুধবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে এমএসএমই সেক্টরে প্রায় ৯০ লক্ষ ইউনিটে এক কোটির বেশি মানুষ কাজ করে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজ্যের প্রতিটি জেলা সদরে যে মল বা বড় বাজার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তাতে এখনো পর্যন্ত রাজ্যের ২৩ টা জেলার মধ্যে এগারোটা জায়গায় এই ধরনের মল তৈরির জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। জায়গাগুলির মধ্যে রয়েছে পুরুলিয়া, দার্জিলিং, বাঁকুড়া, কোচবিহার, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও উত্তর দিনাজপুর। এছাড়া রাজারহাট ও দীঘার মতো শিলিগুড়িতেও একটি ‘বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টার’ তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নিউটাউনে ‘বিশ্ব অঙ্গন’ নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের পার্ক তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড এন্টারটেইনমেন্ট কালচারাল পার্ক (IITEC)’ নামে এই পার্কটি হিডকো-র সঙ্গে পিপিপি মডেলে তৈরি করা হবে। যার জন্য ২৫ একর জমে বরাদ্দ করা হয়েছে।