সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রচারের অঙ্গ হিসাবে এই মুহূর্তে পূর্ব এশিয়া সফরে রয়েছেন একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল, যে দলে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার টোকিওতেই দুই বিখ্যাত বাঙালির স্মৃতিসৌধে গিয়ে আলাদা করে শ্রদ্ধা জানান অভিষেক।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিওতে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর একের পর এক বৈঠক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। জাপানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত, জাপানের বিদেশমন্ত্রী, জাপানের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী সহ অনেকের সঙ্গেই বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎকার পর্ব সারা হয়েছিলো। এগুলি সবই ছিলো সফরের সরকারি অনুষ্ঠান। শুক্রবার, সফরের দ্বিতীয় দিন সফরসূচি থেকে আলাদা করে সময় বের করে অভিষেক স্মরণ করলেন দুই বিখ্যাত বাঙালিকে, এই মুহূর্তে যাঁদের স্মৃতিসৌধ রয়েছে এই টোকিও শহরেই।
বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসু, যিনি ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি, এই টোকিওতেই মারা যান। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার ফলে বৃটিশদের হাতে গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে ১৯১৫ সালে জাপানে পালিয়ে যান রাসবিহারী বসু। সেখান থেকেই তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। সেই সময় জাপান সরকারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। এমনকি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যাতে জাপান সরকার সহায়তা করে, সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন এই বিপ্লবী বাঙালি। ১৯৪৫ সালে জাপানে থাকাকালীন মারা যান তিনি। জাপানের ‘তামা সিমেট্রি'(Tama Cemetery) তে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। শুক্রবার তাঁর ব্যস্ত সিডিইল থেকে সময় বের করে, তামা সিমেট্রিতে গিয়ে রাসবিহারী বসুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর পাশাপাশি অভিষেক টোকিও শহরের অপর প্রান্তে ইয়াসুকুনি মন্দির (Yasukuni Shrine) প্রাঙ্গণেও জান। এই মন্দির প্রাঙ্গণ এলাকায় শায়িত রয়েছেন আরেক বিখ্যাত বাঙালি। জাস্টিস রাধাগোবিন্দ পাল। শুধু বাংলা বা ভারত নয়, জাপানিদের কাছেও জাস্টিস পাল এতটাই সন্মানিত জায়গায় রয়েছেন যে ১৯৬৬ সালে জাপান সরকার তাঁকে জাপানের সর্বোচ্চ সন্মান ‘অর্ডার অফ দ্য সেক্রেড ট্রেজার ফার্স্ট ক্লাস’ সন্মানে ভূষিত করেছিলো। জাপানের টোকিও শহরে তাঁর নামে জাদুঘর, সড়ক ও স্ট্যাচু রয়েছে। ১৯৬৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর এই মন্দির প্রাঙ্গনেই তাঁর নামে তৈরি করা হয় মনুমেন্ট। শুক্রবার সেই মনুমেন্টে গিয়ে জাস্টিস রাধাগোবিন্দ পালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অভিষেক।
রাসবিহারী বসুর স্মৃতিস্থল পরিদর্শন করে ও শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেক লিখেছেন, “বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলার এই কৃতী সন্তান বীরকে শ্রদ্ধা জানানোর সময় সত্যিই খুব গর্ব অনুভব করছি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা ভারত সারাজীবন মনে রাখবে।” তবে এই মনুমেন্টের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নিজের খেদ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। টোকিওস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ও ভারতীয় দূতাবাসের কাছে তিনি আবেদন করেছেন যাতে ভারতের এই কৃতি সন্তানের যেন যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়।