যতদিন যাচ্ছে ডিজিটাল অ্যারেস্ট শব্দটার সঙ্গে ক্রমশ পরিচিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকের লক্ষ লক্ষ টাকাও খোয়া যাচ্ছে। এবার কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে ঘটল সেই ঘটনা। ২৫ লক্ষ টাকা খোয়ালেন এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ সিবিআই থেকে বলছি এই পরিচয় দিয়ে ডিজিটালি গ্রেফতার করে এক কেন্দ্রীয় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তার থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিল এই অসাধু চক্রের সঙ্গে যুক্ত কারবারিরা। ইতিমধ্যেই সাইবার ক্রাইম শাখা গোটা বিষয়টা দেখছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিবিআই পরিচয় দিয়ে অভিযুক্তেরা ন্ডিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যান্ডার্ডসের ডেপুটি ডিরেক্টর শৌভিক শিকদারকে পার্ক স্ট্রিটের এক হোটেলে আটকে রাখে। তার পরে তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ২৫ লক্ষ টাকা। এই ঘটনায় হাওড়া এবং নিউটাউনের বেশ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল, বহু আধার-প্যানের জেরক্স, ব্যাঙ্কের চেকবই উদ্ধার হয়েছে। সেসব বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। আলিপুর আদালতে তাদের পেশ করা হলে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
ধৃতদের খোঁজে পুলিশ প্রথমে তল্লাশি চালায় নিউটাউন এলাকায়, সেখান তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় তাদের নাম নরপত সিংহ, রাজেন্দ্র সোনি, হরিশ কুমার। তাদের জেরা করে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। হাওড়া থেকে ধৃতদের নাম মনোহর, সংগ্রাম সিংহ, সুরজ, দিলীপ এবং জিতেন্দ্র। ধৃতেরা সকলেই রাজস্থানের বাসিন্দা। কলকাতায় এসে তারা নিউ টাউনে প্রথমে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। তার পরে প্রায় প্রতিদিন ঠিকানা বদলাতে থাকেন। এর পরে দুই দলে ভাগ হয়ে যান অভিযুক্তেরা। হাওড়া থেকেও প্রতারণা শুরু করেন বলে অভিযোগ।
কিভাবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট হলেন ওই ব্যক্তি? যেরকমটা জানা যাচ্ছে যে, মুম্বই পুলিশের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যযক্তি তাঁকে বলে, একটি পার্সেল ধরা পড়েছে, যার মধ্যে থেকে মাদক উদ্ধার হয়েছে। যে ঠিকানাটি দেওয়া হয়েছে, সেটি শৌভিকের। মুম্বই পুলিশ সিবিআইকে বিষয়টি জানাচ্ছে। গোটা বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তাঁকে অনলাইনে কিছু ভুয়ো নথিও পাঠানো হয়। এর পর তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়, নিরাপত্তার জন্যক একটি হোটেলে গিয়ে নিজেকেই বন্দি করতে। তিনি পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলে গিয়ে এমনভাবে নিজেকে বন্দি করেন যে, রুমের বাইরে খেতেও যেতেন না। ধাপে ধাপে তাঁর কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা আদায় করে জালিয়াতরা। বর্তমান সময়ে এই ডিজিটাল অ্যারেস্টের জাল এমন ভাবেই ছড়িয়েছে যে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই জালে আবদ্ধ হচ্ছেন মানুষ। তাই অচেনা কোন ফোন কল বা বিশেষত যেখানে বলা হচ্ছে পার্সেল আছে সেটা পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে এই জাতীয় কিছু কথা বলা হলেই সঙ্গে সঙ্গে সেই ফোন কেটে দিন। সাবধানে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।