আমাদের দেশেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রান্নাঘর। ওড়িষার পুরীতে এই রান্নাঘর। নির্দিষ্ট করে যদি বলতে হয়, তবে জগন্নাথ দেবের রান্নাঘরই বিশ্বের সবচেয়ে বড়।
প্রবীর মুখার্জী, সাংবাদিক : আমাদের এই দেশেই অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় রান্নাঘর। ওড়িষার পুরীতে এই রান্নাঘর। নির্দিষ্ট করে যদি বলতে হয়, তবে জগন্নাথ দেবের রান্নাঘরই বিশ্বের সবচেয়ে বড় । নানা কাহিনী রয়েছে এই রসুই ঘর বা রোসাঘরকে কেন্দ্র করে। প্রায় ৮০০ বছর ধরে বজায় রেখেছে স্বদেশীয়ানা। হ্যাঁ। ঠিকই পড়ছেন। এখনও কোনও বৈদ্যুতিৎ চুল্লি বা গ্যাসের কোনও ওভেনে হয় না রান্না। ব্যবহার করা হয় না ধাতব কোনও বাসনপত্র। রান্নার প্রয়োজনীয় জল সে তো রান্নাঘরের মধ্যেই প্রবাহিত। যা বাইরে থেকে দেখার কোনও উপায় নেই।
প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করে থাকে। কোনও দিন সংখ্যাটা বাড়তেও পারে। আবার কোনও দিন সংখ্যাটা কমও হতে পারে। কিন্তু, জগন্নাথ দেবের প্রসাদ কোনও দিন কমও পড়ে না আভার কোনওদিন উচ্ছিষ্টও হয় না। পুরীর মন্দিরের অবাক করা যে বিষয়গুলি রয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম বৈকি।
অবাকের আরো আছে. যেমন এখানে ৭৫২টি উনুনে হয় রান্না। এই রোসাঘরের দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট। প্রস্থে ১০০ ফুট। উচ্চতা ২০ফুট। হেঁশেলের মধ্যে রয়েছে ৩২টি ঘর। উনুনের দৈর্ঘ্য ৪ ফুট। প্রস্থে আড়াই ফুট। উচ্চতায় প্রায় ২ফুট। প্রতিটি উনুনের রয়েছে একটি করে বড় মুখ। তার চারপাশে রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট মুখের উনুন। সবচেয়ে বড় মাটির হাঁড়িতে অন্ন রান্না হয়। তার ওপর থাকে আরও হাঁড়ি। সেগুলিতে নানা সব্জি রান্না হয়। একের ওপর আরএকটি করে চাপিয়ে মোট ৭ থেকে ৯টি হাঁড়িতে রান্না হয় একসঙ্গে। কিন্তু, মজার কথা কি জানেন, একেবারে নীচের হাঁড়ি থেকে ওঠা বাস্পের ভাপেই সবচেয়ে উঁচু হাঁড়ির রান্না সবার আগে শেষ হয়।
জগন্নাথ দেবের ভোগে কোনও গুঁড়ো মশলা ব্যবহার করা হয় না। বাটা মশলাই শুধুমাত্র রান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রান্না করা সময়ে কোনও হাঁড়ির মুখের ঢাকনা খুলে কোনও সব্জিকে পা পায়েশকে নাড়াচাড়া করা হয় না।একেবারে ওপরের হাঁড়িতে রান্নার পর তার নীচের হাঁড়ির রান্না শেষ হয়। এইভাবে সবার শেষে রান্না শেষ হয় সবচেয়ে নীচে যে হাঁড়িটির রান্না। কোনও চিনি জগবন্ধুর রান্নায় ব্যবহার করা হয় না। গুড় ব্যবহার করা হয়। মশলার মধ্যে ছোট এলাচ-বড় এলাচ-দারুচিনি-লবঙ্গ-গোলমরিচ-আদা-কালো সরিষা–জায়ফল-জয়িত্রী-নুন ও হলুদ। প্রতিদিন মোট ৫৬ রকমের ভোগ রান্না করা হয় জগন্নাথ-বলভদ্র ও সুভদ্রার জন্য। ভোগেরও রয়েছে রকমফের। পাক্কা ভোগ ও সুক্কা ভোগ। কীরকম সেই ভোগ…! চোখ রাখুন আর প্লাস নিউজ ডিজিটালে।