ইরানের ওপর ইজরায়েলের হামলার আগেই্, ইরান থেকে মার্কিন কর্মীদের সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রশ্ন উঠেছিল ট্রাম্প কি তাহলে আগে থেকেই জানতেন ইজরায়েলের এই হামলার ব্যাপারে? প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বিষয়কে অস্বীকার করা হলেও ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন তিনি জানতেন তার বন্ধু তার চিরশত্রুর ওপর হামলা করবে, তিনি নাকি সেটা পিছিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। এবার এই হামলার সমস্ত দায় তিনি ইরানের ওপর চাপিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন ইরান পরামণু চুক্তিতে সই না করলে আরও বড় হামলা হবে।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে তার জন্য ইরানকেই দায়ী করলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। কার্যত বুঝিয়ে দিলেন, আমেরিকার দাবি না মানার জন্যই এমন হামলার মুখে পড়তে হয়েছে তেহরানকে। শুরু তাই নয়, আগামী দিনে ইরানের মাটিতে আরও বড় হামলা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প।
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, ‘এই হামলার কথা তিনি আগে থেকেই জানতেন। ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল ইরানকে। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই ইজরায়েল হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ঠেকাতে আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু ইরান তাদের অবস্থানে অনড় ছিল। সেই কারণেই তাদের এই পরিণতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প লিখেছেন, ” পরমাণু চুক্তি করার জন্য ইরানকে একের পর এক সুযোগ দিয়ে গেছি। আমি ওদের কড়া ভাষায় বলেছি যে, এটা করো । ওরা যেভাবেই চেষ্টা করুক, যত কাছেই আসুক, ওরা এটা করতে পারবে না…ইতিমধ্যেই অনেক মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে, ইতিমধ্যেই আরও পাশবিক হত্যালীলা পরিকল্পনা হয়ে গেছে, যা থামানো যেতে পারে। কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকার আগে ইরানকে চুক্তি করতেই হবে, একসময় যা ইরান সাম্রাজ্য হিসাবে পরিচিত ছিল তাকে রক্ষা করুন।”
আগামী রবিবার ওমানে ইরান এবং আমেরিকার প্রতিনিধির মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সেই বৈঠক কি ইজরায়েলি হামলার পরেও হবে? ট্রাম্প যদিও আশাবাদী। আমেরিকার প্রতিনিধি নির্দিষ্ট সময়েই পৌঁছে যাবেন ওমানে। কিন্তু ইরান ওই বৈঠকে আর যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ট্রাম্প সেই সংশয় গোপন করেননি। জানিয়েছেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে রবিবারের বৈঠকে ইরান না-ও যোগ দিতে পারে। রবিবার, ১৫ জুন ওমানে আমেরিকার তরফে বৈঠকে থাকার কথা বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের।
উল্লেখ্য, ইরান পরমাণু শক্তিধর হোক, তা পশ্চিমী বিশ্ব কোনওভাবেই চায় না, ইরানের পরমাণু শক্তিধর হওয়ার প্রচেষ্টার জেরে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ক্ষুব্ধ আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে একটি পরমাণু চুক্তি করে ইরান। ওই চুক্তি অনুযায়ী ইরান নিজেদের পরমাণু প্রকল্প সীমিত করবে। এর বিনিময়ে তেহরানের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হবে নিষেধাজ্ঞা। ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই সেই চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেন ট্রাম্প। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর তেহরানের সঙ্গে এই সংক্রান্ত চুক্তি নতুন করে করতে আবার তৎপর হয়েছেন তিনি। তবে নয়া চুক্তিতে একাধিক মার্কিন শর্তে আপত্তি জানিয়েছে ইরান। যার জেরেই ক্ষুব্ধ হয় হোয়াইট হাউস। এবার ইরান কোন পথে হাঁটে সেটাই দেখার।