ইজরায়েল এবং ইরানের মধ্যে হামলা এবং পালটা হামলার এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতেও। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর সেই আশঙ্কায় গত শুক্রবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায় ৯ শতাংশেরও বেশি, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে করে আকাশ ছুঁয়ে ফেলতে জ্বালানি তেলের দাম।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি ভারতের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে কারণ ইরান বিশ্বের অন্যতম তেল রপ্তানিকারক দেশ। ইরান থেকেই ভারত-সহ বিভিন্ন দেশে তেল সরবরাহ করা হয়। আর সেক্ষেত্রে মূল পথ হিসেবে ব্যবহার করা হয় হরমুজ প্রণালীকে। বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় এই অঞ্চল দিয়ে। ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর জেরে ভারতে তেল সরবরাহ বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের আমদানি করা তেলের দুই-তৃতীয়াংশ এখান দিয়েই আসে। তাই সরবরাহে সমস্যা দেখা দিলে দেশজুড়ে ফের বাড়বে তেলের দাম। গত দু’দিনেই তেলের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। সংঘাত চলতে থাকলে ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০০-১২০ ডলার হতে পারে।
যুদ্ধের জেরে বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম শনিবার ৬ ডলার বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৭৮ ডলার প্রতি ব্যারেল। এই যুদ্ধ আগামী দিনে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে ব্যবসা বাণিজ্যকে। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে ভারতের উপর। অন্যদিকে ভারতকে নিজের চাহিদার ৮০ শতাংশ তেল বাইরে থেকে কিনতে হয়। এই আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসে। দুই দেশের উত্তাপ না কমলে সেক্ষেত্রে পেট্রোল, ডিজেল-সহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম মারাত্মকভাবে বাড়বে। সরাসরি এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন , ইরান ইজরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতি তেলের দাম নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে। এর জেরে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে তেলের জোগানে বড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইরান রোজ ২ কোটি ব্যারেল তেলের জোগান স্তব্ধ করতে পারে। সেখানকার অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশেও এই প্রভাব পড়তে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়েই তেলের জোগান কমার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ২ ডলার বৃদ্ধি পেলে পেট্রল, ডিজেলে লিটারপিছু ১ টাকা ক্ষতি হয় ভারতীয় তেল সংস্থাগুলির। সেক্ষেত্রে খুচরো বাজারেও পেট্রল, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। উল্লেখ্য, এদিনই ভারতীয় তেল সংস্থাগুলির শেয়ারের দরে পতন ঘটেছে।