এই সময়ে যখন বৃদ্ধ বাবা মাকে সবাই বোঝা মনে করেন ,তখন বেশি বয়সে একা বাবার দায়িত্ব নিয়ে তাকে ভালো রাখার উদাহরণ সত্যি বিরল।
মৌসুমী সাহা -বাবা দিবসে এ এক অন্যরকম বাবা ও মেয়ের গল্প ।কৃষ্ণ যেমন দেবকীর সন্তান।তেমনি আপামর জনগণের কাছে যশোদার সন্তান। রক্তের সম্পর্কের পাশাপাশি আরও একটি বড় সম্পর্ক স্নেহ ,ভালবাসা ,মমতার সম্পর্ক। সন্তান দত্তক নেন অনেকেই কিন্তু পিতৃসম মানুষের দায়িত্ব নেন কজন ।যখন সবাই বয়স্ক বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বাধ্য করছেন ,তখন বাবাকে দত্তক নেবার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন একতা। আর তিনি যাকে দত্তক নিয়েছেন তিনি বিখ্যাত চিত্র পরিচালক প্রভাত রায়। প্রায় তিন বছর হয়ে গেল বাবা মেয়ের এই সম্পর্কের ।বাঙুর হাসপাতালে প্রথম প্রভাত রায়ের দায়িত্বটা নিয়েছিলেন মেয়ে একতা।
কিন্তু কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলেন সেই প্রসঙ্গে আসি, প্রভাত রায়” প্রতিকার” সিনেমার অন্ধভক্ত ছিলেন।
তিনি শুধু ‘প্রতিকার’ নয় তার বিভিন্ন সিনেমার ভক্ত ছিলেন ।যখন সবাই” দিল তো পাগল হে”, “কুছ কুছ হোতা হে “এই সমস্ত ফিল্ম নিয়ে মাতামাতি করতেন সেই সময়ে একতা প্রভাত রায়এর সিনেমার ভক্ত ছিলেন।অনেকবার চেষ্টাও করেছেন দেখা করার কথা বলার ,কিন্তু তখন দেখা পাননি প্রভাত রায়এর।তারপর একদিন জনৈক এক ব্যক্তির উদ্যোগে দেখা করেন একতা প্রভাত রায়ের সঙ্গে ।একতা তার বিয়ের কার্ড হাতে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন জানি আপনি আসবেন না ।সঙ্গে সঙ্গে অবলীলায় প্রভাত রায়ের সিনেমার ডায়লগ সহ এমন অনেক খুঁটিনাটি তথ্য দিয়েছিলেন যা দেখে চিত্র পরিচালক খানিক অবাকই হয়েছিলেন। তখন ও প্রভাত প্রায় স্ত্রী জীবিত ।কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর বড্ড একাকিত্বে ভুগতেছিলেন চিত্র পরিচালক ,এমনকি ডিপ্রেশনে ও চলে যান তার দেখাশোনার কেউ ছিল না তখন। একবার একতা দেখা করতে চান কিন্তু বিরক্ত হয়েছিলেন প্রভাত রায়। খানিকটা অভিমান হয়েছিল সকলের প্রতি কারণ কেউ তার খবর নেয় না সে অর্থে।
এরপর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় দেখা করতে যান একতা। ঠিক করেই নেন যে একা রাখা যাবে না প্রভাত রায় কে শেষে ২০২৩ সালের ৮ই মার্চ দায়িত্ব নেন এই স্বনামধন্য চিত্র পরিচালকের ।শর্ত দেন প্রভাত রায়ের কাছ থেকে কোনদিনও কিছু নেবেন না। কিন্তু প্রভাত রায় যেন কোনদিনও নিজেকে একা ভাববেন না। কেঁদে ফেলেছিলেন চিত্র পরিচালক বলেছিলেন “তোমাকে মাম্মা পাঠিয়েছে”। তবে থেকেই প্রভাত রায় হয়ে যান একতার বাবি। মেয়ের দায়িত্ব পালন করছেন একতা ।তৈরি করেছেন “প্রভাত রায় প্রোডাকশন এন্ড এডভার্টাইজিং” এখনো কাজ করতে চান চিত্র পরিচালক বাবা। তবে শরীরটা খুব একটা ভালো নেই তার। বহু নায়ক নায়িকা তার হাতে তৈরি ,তবে বর্তমানে খোঁজ রাখেন কেউই । ফলে প্রভাত রায় খানিকটা হলেও অভিমানী ।শেষ জীবনে ভালো ভাবে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন একতা । প্রভাত রায়ের সমস্ত পুরস্কার , অ্যালবাম মেমেন্টো, সংরক্ষণ করবেন এটাই তার মেয়ের স্বপ্ন।
ফাদার্স ডে তে এই দুই বাবা মেয়েকে অনেক শুভেচ্ছা এভাবেই ভালো থাকুক সম্পর্কগুলো।।