ভারতে দৈনন্দিন কাজের জন্য যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন হয় তার প্রায় সিংহভাগ অর্থাৎ ৮০ শতাংশ তেল ভারত বিদেশ থেকে আমদানি করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাবিত হতে পারে ভারতের অর্থনীতি। প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতেও।
জুলেখা নাসরিন, সাংবাদিক- পশ্চিম এশিয়ার আকাশে যুদ্ধের ঘন কালো মেঘ। পিছু হঠতে নারাজ ইরান-ইজরায়েল। কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। কথায় আছে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলু খাগড়ার প্রাণ যায়। এখানে শুধুমাত্র দুই দেশের আম জনতাকে উলু খাগড়া ভাবলে আপনি ভুল করবেন। কারণ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করতে গিয়ে গোটা বিশ্বকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে এই দুই দেশ।
মিসাইল কেন্দ্রে হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রকেও নিশানা করেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের মিসাইলে বিধ্বস্ত ইরানের একাধিক জায়গার অয়েল রিফাইনারি সেন্টার। ইতিমধ্যেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ফিল্ড- সাউথ পার্সও। এর ফলেই কার্যত সিঁদুরে মেঘ দেখছে গোটা বিশ্ব।
বিশ্বের একটা বড় অংশ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য নির্ভর করে , সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও। ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী,ইজরায়েল থেকে তেল আমদানি করে থাকে ভারত। ভারতে দৈনন্দিন কাজের জন্য যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন হয় তার প্রায় সিংহভাগ অর্থাৎ ৮০ শতাংশ তেল ভারত বিদেশ থেকে আমদানি করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাবিত হতে পারে ভারতের অর্থনীতি। প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। ইতিমধ্যে ইজরায়েলি হামলায় তেহরানের তেল পরিশোধাগারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ শুনলে আপনিও চমকে উঠবেন। ইজরায়েলি এই হামলায় প্রায় ৩০০ মিলিয়ন অর্থাত ৩০ কোটি লিটার তেল নষ্ট হয়েছে। যে তেলগুলি ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করত ইরান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তেল সরবরাহ ব্যহত হবে।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে ইতিমধ্যেই প্রভাব পড়েছে তেলের বাজারে। মার্কিন অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৯৮ ডলার। ব্রেন্ড ক্রুড ওয়েলের দাম ৭ শতাংশ বেড়ে ৭৪.২৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে, ফলত জ্বালানি তেলের দাম অনেকটাই বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তেল সরবরাহ করা হয় হরমুজ প্রণালী দিয়ে। বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ সরবরাহ হয় এই অঞ্চলের মাধ্যমে। ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে এই অঞ্চলে ইতিমধ্যে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এর জেরে ভারতে তেল সরবরাহ বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে, কারণ ভারতে আমদানি করা তেলের দুই-তৃতীয়াংশ এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই আসে। গত কয়েক দিনের যুদ্ধে তেলের দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। সংঘাত চলতে থাকলে ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০০-১২০ ডলার হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি এখনই যুদ্ধ না থামে, তবে দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ২০০ টাকা বা তার বেশিও হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়বে মধ্যবিত্ত। জ্বালানির দাম বাড়লে, আনুষঙ্গিক সবকিছুরই দাম বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। অগ্নিমূল্য হতে পারে শাক-সবজি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। ফলে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কট শুধু দুই দেশের মাথা ব্যথার কারণ নয়। এটা আমার আপনার মাথা ব্যথার কারণও বটে।