তাঁরা সকলেই যে যার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন, কেউ বা ক্যান্টিনে খাচ্ছিলেন কিন্তু মৃত্যু তাঁদের মিলিয়ে দিয়েছে এক সুতোয়। এতগুলো দেহের এমন অবস্থা আলাদা করে কাউকে চেনা যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষায় ৮৭ জনকে শনাক্ত করা গেছে। কফিনে বন্দী হয়ে শেষবার বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ দলাপাকানো, খণ্ডবিখণ্ড, পুড়ে যাওয়া শরীরগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সেই কারণেই ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই প্রক্রিয়াতেই রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪৭ জন যাত্রীর দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতায় পরিজনেরা বিরক্ত হলেও অন্য উপায় নেই। কারণ পোশাক দেখে কিছু বোঝার উপায় নেই।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানি ছিল যাতে আগুন ধরার ফলে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেই যাত্রীদের বাঁচানো যায়নি। ঝলসে গিয়েছে বেশির ভাগ দেহ। সে কারণে দেহগুলিকে শনাক্তকরণ করতে সমস্যা দেখা দেয়। সমস্ত নিহতদের আত্মীয়দের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার সঙ্গে নিহতদের ডিএনএর নমুনা মিলিয়ে দেখে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। সোমবার আমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার রজনীশ পটেল বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত ৮৭ জন নিহতের ডিএনএর নমুনা তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে মিলেছে। ৪৭ জনের দেহ ইতিমধ্যে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের দেহ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা গুজরাটের ভারুচ, আনন্দ, জুনাগড়, ভাবনগর, বডোদরা, খেরা, মেহসানা, আরাবল্লী, অহমদাবাদ জেলার বাসিন্দা।’’
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় যখন সব প্রায় ভস্মীভূত, ছিন্নভিন্ন দেহ। কোথাও চামড়া থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না দেহ। পরিজনেরা শেষবার প্রিয়জনকে দেখার আশায় অপেক্ষারত। কিন্তু চিনবেন কী করে? উপায় DNA টেস্ট। সেই রিপোর্ট মিলিয়ে তাদের দেহগুলি পরিবারের হাতে হস্তান্তর করা হচ্ছে। বাড়িতে কফিন পৌঁছনোর সঙ্গে পৌঁছচ্ছে একটি বিশেষ বার্তা। তাতে লেখা- ‘ দয়া করে, কফিনটি খুলবেন না …’। মৃতদেহ হস্তান্তর করার সময় ডেথ সার্টিফিকেট, পুলিসের তদন্ত রিপোর্ট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, এফএসএল রিপোর্ট অর্থাৎ ডিএনএ ম্যাচিংয়ের নিশ্চয়তা এবং মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া গয়না এবং অন্যান্য জিনিস পরিবারের হাতে দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, রবিবারই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। সোমবার প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপাণীর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সোমবার গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানা গিয়েছে।
জানা গেছে ইতিমধ্যেই হদিশ মিলেছে এয়ার ইন্ডিয়ার অভিশপ্ত বিমানের দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্সটির। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ‘ককপিট ভয়েজ রেকর্ডার’ ব্ল্যাক বক্সটি উদ্ধার হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার যে হস্টেলের ছাদে বিমানটি আছড়ে পড়েছিল, সেখান থেকে প্রথম ব্ল্যাক বক্সটি উদ্ধার করা হয়েছিল। এবার খোঁজ মিলল দ্বিতীয়টির। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুটি ব্ল্যাক বক্স খতিয়ে দেখার পরই দুর্ঘটনার কারণ এবং ভেঙে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বিমানে কী কী হয়েছিল তা খুব শীঘ্রই জানা যাবে।