ত্রিদেশীয় বিদেশ সফরের প্রথম পর্যায়ে রবিবার ভূমধ্য সাগরের পূর্ব দিকের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসে পৌঁছেছেন। সোমবার, সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডস সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান, ‘গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ ম্যাকারিওস III তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানের মত এক বড় স্বীকৃতি লাভের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সম্মান গ্রহণ করে মোদী জানান, ভারতের সঙ্গে সাইপ্রাসের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে এই সম্মানকে দেখছেন তিনি। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডসের হাত থেকে এই সম্মান গ্রহণ করেন তিনি। রবিবারই সাইপ্রাসে পৌঁছোন মোদী। লারকানা বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোডুলিডস। তার পরেই দুই দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্রিস্টোডুলিডস এবং মোদী। দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও উৎসাহী দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
এই সম্মান পেয়ে আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মান আসলে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, এটা যুদ্ধের সময় নয়। আমাদের দুই দেশের বন্ধুত্বকে উৎসর্গ করলাম এই সম্মান। তবে এই গ্র্যান্ড ক্রস আমাদের ১৪০ কোটি ভারতীয়ের জন্য।” উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুরের পর এই প্রথমবার বিদেশ সফরে গিয়েছেন মোদী। মোদী সমর্থকরা স্বাভাবিক ভাবেই বেশ খুশি। মোদী আশাবাদী, ভবিষ্যতে ভারত এবং সাইপ্রাসের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছোবে। দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়েও হাত মিলিয়ে কাজ করার কথা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের পর্যটন শিল্প বৃদ্ধির উপর জোর দেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘সাইপ্রাস ভারতীয়দের কাছে অন্যতম পছন্দের পর্যটনের জায়গা।’’ সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্টকে ভারতে আমন্ত্রণও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা ও পাকিস্তান ও তুরস্কের ঘনিষ্ঠতা যখন রোজ বাড়ছে তার মাঝে ভূমধ্যসাগরের ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রে দুই দশক পর পা পড়ল কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। ফলে নরেন্দ্র মোদীর এই সফরকে নিছক সৌজন্য হিসেবে দেখতে নারাজ কূটনৈতিক মহল। ভারত-পাক সংঘাত ও ইসলামাবাদে তুরস্কের উসকানির মাঝে মোদির সাইপ্রাস সফর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হচ্ছে ভারত-পাক সংঘর্ষ ও পাকিস্তানের তুরস্ক প্রীতির পাল্টা ভারতের ‘অস্ত্র’ হতে চলেছে সাইপ্রাস। মোদীর সাইপ্রাস সফর আসলে তুরস্কের জন্য কড়া বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। এরডোগান যদি ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় সেক্ষেত্রে ভারতের অস্ত্র হয়ে উঠবে সাইপ্রাস। নতুন করে অশান্তির মেঘ ঘনাবে তুরস্কের আকাশে।
ভারত-পাকিস্তানের মতোই তুরস্ক ও সাইপ্রাসের মধ্যেও সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাইপ্রাস। এই পরিকাঠামো প্রকল্প ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রেও বারবার সমর্থন করেছে সাইপ্রাস। তাই ভারত-পাক সংঘাতের আবহেই সাইপ্রাস সফর ভারতের পক্ষে লাভজনক হতে পারে।