মাম্পি রায়, সাংবাদিক- ইরানের জাতীয় টেলিভিশন কেন্দ্রে খবর পড়ছিলেন সঞ্চালিকা সাহার ইমামি। ইজরায়েলি আগ্রাসনের কথা তুলে ধরছিলেন তিনি। ঠিক তখনই স্টুডিওতে আঁছড়ে পড়ল ইজ়রায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র। প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিলেন সঞ্চালিকা।
এই হামলায় ওই সংবাদমাধ্যমের অফিসে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। চার দিন পেরিয়ে গেলেও ইরান-ইজ়রায়েলের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই অব্যাহত। এরই মধ্যে ইজরায়েল দাবি করেছে, নিজেদের থেকে আয়তনে ৭৫ গুণ বড় দেশ ইরানের বেশিরভাগ এয়ারস্পেস দখল করে নিয়েছে তারা। রাজধানী তেহরানের উপরেও ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান উড়ছে। তাদের আটকানোর কেউ নেই বলেও দাবি করছে ইজরায়েল। ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “এই যুদ্ধে জয়ের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে ইজরায়েল। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, শীঘ্রই নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করে নেবে ইজরায়েল। ইজরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল পরমাণু ও মিসাইল বিপদের সমাপ্তি ঘটানো। যতক্ষণ আমরা তেহরানের আকাশের নিয়ন্ত্রণ না নিচ্ছি, ততক্ষণ হামলা চালিয়ে যাবো। ইরানের শাসন আমাদের নাগরিকদের নিশানা করছে। এই পরিস্থিতিতে তেহরানের নাগরিকদের আমি আবেদন করতে চাই যে, তাঁরা যেন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। কারণ আমাদের সেনা অভিযান জারি থাকবে। ক্রমশ জয়ের কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। “
ইজরায়েলের হামলায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। মিসাইল হামলা জারি রাখবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ মেজেস্কিয়ান জানিয়েছেন, “আমাদের পাল্টা আক্রমণে খুব পশ্চাবে শত্রু। ইজরায়েলের উপর একাধিক ব্যালেস্টিক মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। তাতে অন্তত ১২জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন দূতাবাসের অফিসও ।“
যুদ্ধ ৪দিন পেরিয়ে গেলেও এতদিনে ইজরায়েলের চাইতে ইরানেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে। ইজরায়েলে মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের, সেখানে ইরানে মৃত অন্তত ২২৪জন। ইরানে আহতের সংখ্যা দেড় হাজার। ইজরায়েলে আহত ৫৯২ জন। অনুমান করা হচ্ছে ৪দিনেই ইরানের ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ইজরায়েলের ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইরানের ৪টি পারমাণবিক কেন্দ্র, তেহরানের সেনা হেডকোয়ার্টার, ৩টি এয়ারবেস এবং ১২০টি মিসাইল লঞ্চারকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইজরায়েল। অন্যদিকে ইজরায়েলের সেনার বদলে তেল আভিভ ও হাইফার মতো শহরের উপর মিসাইল ফেলেছে ইরান। যেখানে মূলত সাধারণ মানুষের বসবাস। দাবি করা হচ্ছে এখনও ইজরায়েলের কোনও সেনা আধিকারিকের মৃত্যু হয়নি। অন্যদিকে ইজরায়েলি হামলায় ইরানের ২০জন উচ্চপদস্থ সেনা কম্যান্ডার ও জেনারেলের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েলে মোসাদের অফিস ও এয়ারবেসকেও নিশানা করেছে ইরান । অন্যদিকে ইজরায়েল ইরানের মিলিটারি কমান্ড সেন্টার, হেডকোয়ার্টার এবং ইরানের সবচেয়ে বড় অয়েল গ্যাস ফিল্ডেও হামলা চালিয়েছে।
ইরান এবং ইজ়রায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে পড়ল। দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের আবহে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তেহরান থেকে মানুষজনকে সরে যাওয়ার আর্জি জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, “পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির জন্যই জি-৭ সম্মেলনের সূচি সম্পূর্ণ না-করেই ফিরছেন ট্রাম্প।“ হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, “পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির কথা মাথাই রেখেই রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে নৈশভোজের পরে আমেরিকায় ফিরে আসবেন ট্রাম্প।“ সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে খবর, “দ্রুত ইরানের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করতে হবে”। আমেরিকার প্রশাসনিক আধিকারিকদের এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তেহরান খালি করার বার্তা কেন দিলেন ? তাহলে কি আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে চলেছে ইরানে ?