দক্ষিণ ভারতের বিস্ময়কর কিছু শৈলশহর এই জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোকেও সৌন্দর্যে টেক্কা দিতে পারে। এমন কিছু জায়গা আছে, যা এখনও পর্যটকদের ভিড়মুক্ত, শান্ত, রহস্যময় এবং মন ভরিয়ে দেওয়া সৌন্দর্যে ভরপুর।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- বর্ষা মানেই অনেকের কাছে এক ভেজা ছুটির অপেক্ষা। কেউ পাহাড়ের কুয়াশা দেখতে ছুটে যান উত্তরে, কেউ আবার সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে মনের কথা মেলে ধরেন। তবে দক্ষিণ ভারতের বিস্ময়কর কিছু শৈলশহর এই জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোকেও সৌন্দর্যে টেক্কা দিতে পারে। এমন কিছু জায়গা আছে, যা এখনও পর্যটকদের ভিড়মুক্ত, শান্ত, রহস্যময় এবং মন ভরিয়ে দেওয়া সৌন্দর্যে ভরপুর। তাহলে চলুন এবারের বর্ষার ভেজা দিনগুলোর জন্য খোঁজ নিই দক্ষিণ ভারতের এমনই তিনটি অপেক্ষাকৃত অজানা অথচ মন কাড়া গন্তব্যের—
১) ভালপারাই, তামিলনাড়ু: সবুজ পাহাড় আর বৃষ্টিভেজা কুয়াশার মায়াজাল
তামিলনাড়ুর আন্নামালাই রেঞ্জে, পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ভালপারাই প্রকৃতি প্রেমিকদের কাছে স্বর্গ। বর্ষা এলেই সবুজ পাহাড় আরও ঝলমলিয়ে ওঠে। মেঘে ঢাকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো কিংবা জানালায় বসে চা হাতে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ-এ যেন এক আজীবনের অভিজ্ঞতা। এখানে রয়েছে কফি-বাগান, ঝর্না আর নির্জনতা মিশে থাকা অসাধারণ সব দৃশ্যপট। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে আপার সোলার ড্যাম, নিরার ড্যাম, আলিয়ার ড্যাম, মাঙ্কি ফলস, বালাজি মন্দির, এবং ভেলাঙ্কান্নি গির্জা। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ইন্দিরা গান্ধী ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। বার্কিং ডিয়ার, বুনো শুয়োর, ল্যাঙ্গুর থেকে শুরু করে অসংখ্য পাখি আর বন্যপ্রাণের বাস এখানে। চাইলে ঘুরে দেখা যায় আন্নামালাই টাইগার রিজার্ভও।
কীভাবে যাবেন?
সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর কোয়েম্বাটুর যার দূরত্ব ১১৯ কিমি। রেলস্টেশন হিসাবে সবচেয়ে কাছে পোলাচি যার দূরত্ব ৬৪ কিমি। রেলস্টেশন বা বিমানবন্দর থেকে গাড়ি বা ক্যাব নিয়েই যাওয়া সুবিধাজনক।
২) নেল্লিয়ামপতি, কেরল- অরণ্য-ঝর্না-চা-বাগানের শান্ত আস্তানা
মুন্নারের মতো জনপ্রিয় না হলেও, নেল্লিয়ামপতির সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। কেরলের এই শৈলশহর যেন এক জাদুর বাক্স-যেখানে আছে ঘন অরণ্য, চা ও কফির বাগান, ঝর্ণার ছটা আর মশলার সুগন্ধে মোড়া এক অবিচ্ছিন্ন নৈসর্গিকতা। এখানকার ধাপে ধাপে সাজানো পাহাড়ি চাষের দৃশ্য, ঠান্ডা বাতাস আর বৃষ্টিভেজা গাছগাছালি মন কাড়ে সহজেই। এই অঞ্চল ট্রেকার ও পক্ষীপ্রেমীদের জন্য আদর্শ। পশ্চিমঘাটের বন্যপ্রাণে ভরপুর নেল্লিয়ামপতির অরণ্যে দেখা মেলে চিতা, বাইসন, হরিণ, হাতি সহ বহু প্রাণীর। গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্নবিল, মালাবার গ্রে হর্নবিলসহ অসংখ্য পাখি চোখে পড়ে এখানে।
কীভাবে যাবেন?
সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হল কোচি, যা ১১৫ কিমি দূরে। ১২০ কিমি দূরে কোয়েম্বাটুর থেকেও যাওয়া যায়। রেলস্টেশনের মধ্যে পাল্লাকাড যা রয়েছে ৫৬ কিমি ও ত্রিশূর ৭৭ কিমি দূরে।
৩) সকলেশপুর, কর্নাটক: ইতিহাস আর প্রকৃতির যুগলবন্দি
পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কোলে অবস্থিত কর্নাটকের সকলেশপুর প্রকৃতি ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের এক অনন্য ঠিকানা। বেঙ্গালুরু থেকে মাত্র ২২০ কিমি দূরে অবস্থিত এই শহরে যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত, তেমনই আছে ঐতিহাসিক মনজরবাদ ফোর্ট-যা টিপু সুলতান তৈরি করেছিলেন। উপর থেকে এই দুর্গ তারার মতো দেখতে।
এখানে রয়েছে কুক্কে সুব্রহ্মণ্য মন্দির, সকলেশ্বর মন্দির-যা ধর্মপ্রাণ ভ্রমণার্থীদের টানে অনন্য। বর্ষায় সকলেশপুরের হাদলু ও মগঝাল্লি জলপ্রপাত দেখার মতো হয়। চাইলে অগ্নি গুড্ডা পাহাড় ও ওমবাট্টু গুড্ডা-তে হাইকিং করেও সময় কাটানো যায়।
কীভাবে যাবেন?
বেঙ্গালুরু থেকে সড়কপথে ২২০ কিমি, ম্যাঙ্গালুরু থেকে ১২৮ কিমি। রেলপথেও সংযুক্ত-সকলেশপুরে রয়েছে নিজস্ব রেলস্টেশন। কর্নাটকের অন্যান্য বড় শহর থেকেও সহজেই যাওয়া যায়।
ভিড় নয়, প্রকৃতির কোল চাই? তবে এবার ছুটে চলুন দক্ষিণের এই অফবিট সৌন্দর্যের ঠিকানায়। এই বর্ষায় যদি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় একান্তে কাটানোর ইচ্ছে থাকে, আর একটু কম পরিচিত, ভিড়মুক্ত অথচ অনন্য রূপময় কোনও গন্তব্যের খোঁজ থাকে-তাহলে ভালপারাই, নেল্লিয়ামপতি বা সকলেশপুর হতে পারে সেই বহু কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা। প্রকৃতি, শান্তি আর আত্মবিশ্বাসকে নতুন করে চিনে নেওয়ার এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে এই ভ্রমণ।