বহু রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করেছেন, সিজার করানোর জন্য এখনও গর্ভবতী মহিলাদের মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে, যা গাজোল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। যাত্রাপথে অনেক সময় গর্ভবতীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেই প্রসব হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকা ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটটি পুনরায় চালু করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। রোগীদের অভিযোগ, রক্ত সংকট দেখা দিলে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ।
বিশ্বজিৎ মণ্ডল, সাংবাদিক, মালদহ- সম্প্রতি গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালকে উন্নীত করে ‘স্টেট জেনারেল হাসপাতাল’-এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ফলে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইতিমধ্যেই এই হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য এখন শুধু গাজোল ব্লক নয়, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও রোগীরা এখানে ছুটে আসছেন। তবে চিকিৎসক থাকলেও বহু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পরিকাঠামোর অভাব এখনও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সিজার অপারেশনের মতো জরুরি পরিষেবা না থাকায় চরম সমস্যায় পড়ছেন প্রসূতি রোগীরা ও তাঁদের পরিবার।
বহু রোগীর আত্মীয় অভিযোগ করেছেন, সিজার করানোর জন্য এখনও গর্ভবতী মহিলাদের মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে, যা গাজোল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। যাত্রাপথে অনেক সময় গর্ভবতীর অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেই প্রসব হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয়দের দাবি, হাসপাতালের বিস্তৃত পরিসর রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত ‘মাতৃমা’ বিভাগ চালু করা হোক। সেই সঙ্গে হাসপাতালের দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকা ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটটি পুনরায় চালু করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। রোগীদের অভিযোগ, রক্ত সংকট দেখা দিলে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে গাজোল স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, অস্থি রোগ বিশেষজ্ঞ ও অ্যানস্থেসিস্ট রয়েছেন। তবে পরিকাঠামোর অভাবে এখনও কোনও অপারেশন, এমনকি সিজারও সম্ভব হচ্ছে না।
এই প্রসঙ্গে গাজোল বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক চিন্ময় বর্মন অভিযোগ করেন, “গাজোলের এই হাসপাতাল কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে নির্মিত হলেও রাজ্য সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে তার কৃতিত্ব নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও পরিষেবার অভাবে হাসপাতাল কার্যত অচল। শুধু প্রচারের আলোয় থাকার জন্য এসব ঘোষণা করা হয়েছে।”
তবে এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছেন গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। তাঁর কথায়, “আমাদের সরকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। গাজোল স্টেট জেনারেল হসপিটালের কিছু ঘাটতি রয়েছে ঠিকই, তবে সেই বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই সিএমওএইচ ও ডিএমকে জানিয়েছি। বিরোধীরা এখন সরকারের সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করেও অভিযোগ করছে।” মালদা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি জানিয়েছেন, “গাজোল হাসপাতালে এখনো সিজার অপারেশন শুরু হয়নি, তবে নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। সেখানে বর্তমানে চার জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সরকার ইতিমধ্যেই অপারেশন থিয়েটার ও ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সিজার ও অন্যান্য অপারেশন চালু হয়ে যাবে।”
স্থানীয়দের আশা, সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খুব শীঘ্রই গাজোল স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা চালু হবে এবং হাসপাতাল তার ‘স্টেট জেনারেল’ নামের মর্যাদা বজায় রাখতে পারবে।