উন্নয়ন যে সরকারের প্রধান হাতিয়ার, সেই উন্নয়ন ইস্যুতে বিধানসভায় প্রশ্ন তুলতেই যেন প্রবল অনীহা শাসক দলের অধিকাংশ বিধায়কের মধ্যে। এই বিষয়ে কিন্তু অনেক বেশি সক্রিয় বিরোধী বিজেপি দলের বিধায়করা। প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে শুরু করে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব হোক বা উল্লেখ পর্ব, প্রতিদিন বিধানসভার প্রথম অর্ধে যখন বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা নিজেদের এলাকা সংক্রান্ত একাধিক সমস্যা ও সরকারি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, সরকারের কাছে আবেদন করছেন নিজের বিধানসভা এলাকার কাজ করানো নিয়ে, তখন শাসক দলের অধিকাংশ বিধায়ক যেন নীরব দর্শক।
*সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধি*- বিধানসভা অধিবেশন মানে শুধুই বিভিন্ন বিল এনে আইন প্রণয়ন করা নয়, তর্ক বিতর্ক বা আলোচনা নয়, বিধানসভার অধিবেশন মানে এসবের পাশাপাশি আরেকটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিধায়কদের তাঁদের নিজ নিজ এলাকার অভাব অভিযোগের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা সরকারকে জানানো। অধিবেশন কক্ষে কোনো বিষয় তথ্য সহ উল্লেখ করা মানে সেটা বিধানসভার রেকর্ডে থেকে যাওয়া। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে কোনো বিধায়ক তাঁর এলাকার কোনো কাজ দীর্ঘদিন ধরে করাতে না পেরে, বিধানসভায় মন্ত্রীকে জানানোর পর সেই কাজটা হয়ে গেছে। এমনকি অধ্যক্ষও অনেক সময় মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন, আপনি একটু বিষয়টি দেখুন। মাননীয় সদস্য অনেক দিন ধরে অমুক কাজটার কথা বলছেন। এইভাবে অতীতে অনেক বিধায়ক অনেক কাজ করিয়ে নিতে পেরেছেন। আর এই কাজে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বিরোধী দলের বিধায়করা।
এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গের বিরোধী বিজেপি বিধায়কদের প্রশ্নের সংখ্যা এবং মান দেখে স্পষ্ট, তাঁরা এলাকার মানুষের কথা তুলে ধরতে যথেষ্ট সক্রিয়। অন্যদিকে শাসক দলের বিধায়কদের মধ্যে যেন প্রশ্ন করতেই অনীহা।
এই নিয়ে সরকারি দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ পর্যন্ত বারবার শাসক দলের বিধায়কদের আসনের সামনে গিয়ে বলেন— “প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন করুন। সাপ্লিমেন্টারি প্রশ্ন করুন”, তবুও সাড়া নেই! প্রশ্নোত্তর পর্বে দাঁড়িয়ে থেকেও মুখ খোলেন না অনেকে। এমনকি শাসকদলের বহু বিধায়কের নিয়মিত অনুপস্থিতিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দলীয় বিধায়কদের এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে এর আগে একাধিকবার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকেও বারবার দলীয় বিধায়কদের সতর্ক করা হয়েছে, আরো বেশি করে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য বিধায়কদের বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। শাসক দলের পক্ষে বর্ষীয়ান বিধায়ক সমীর পাঁজা বা কালীপদ মন্ডলের পাশাপাশি নতুন বিধায়ক সুকান্ত পাল, জয়প্রকাশ টোপ্পো, সুমন কাঞ্জিলালের মতো হাতে গোনা মাত্র ৫-৬ জন বিধায়কই রয়েছেন যাঁদের সক্রিয়তা চোখে পড়ে। বাকিরা ওই শুধু আসেন, বসেন, দেখেন, শোনেন ও চলে যান এর পর্যায়ে। তবে সংখ্যায় কম হলেও বিজেপির বিধায়করা কিন্তু এই একটি বিষয়ে বিধানসভায় যথেষ্ট সক্রিয়।
বিধানসভায় বিধায়কদের উপস্থিতির হার কম থাকা বা আলোচনায় অংশগ্রহণে অনীহা নিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জনগনের কাছ থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তারাও (জনগন) তো বাইরে রয়েছেন, তারাও তো দেখছেন যে তাঁদের (বিধায়কদের) পারফরম্যান্স কি “?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা শুধুই দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতারও বড় সংকেত। প্রতিনিধিরা যদি মানুষের সমস্যা নিয়ে মুখ না খোলেন, তবে তাদের প্রতি আস্থা হারাবে জনতাই।