বছরে মোট চারটি নবরাত্রি পালন করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শারদীয় নবরাত্রী ও চৈত্রি নবরাত্রি। এই দুটি নবরাত্রি মহাধুমধাম করে পালন করা হয়। বহু মানুষই পালন করে থাকেন এই দুই নবরাত্রি। এছাড়াও রয়েছে মাঘ গুপ্ত নবরাত্রি ও আষাঢ় গুপ্ত নবরাত্রি। সাধারণত সংসার-ত্যাগী সাধকরাই এই দুটি নবরাত্রির ব্রত পালন করে থাকেন। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে মাঘ গুপ্ত নবরাত্রির শুরু হয়। আষাঢ় গুপ্ত নবরাত্রির শুরু আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথি থেকে। সাধারণত জুন বা জুলাইতে পালিত হয় আষাঢ় গুপ্ত নবরাত্রি।
প্রবীর মুখোপাধ্যায়ঃ নবরাত্রির নয়টি তিথিতে দেবীর বিভিন্ন রূপের পুজো করা হয়ে থাকে। যেমন প্রতিপদে শৈলপুত্রী, দ্বিতীয়ায় ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয়ায় চন্দ্রঘণ্টা ইত্যাদি। এই নয়দিনে দেবী দুর্গা যে রূপে পুজিতা হন সংক্ষেপে বর্ণনা করা যাক। প্রতিপদে দেবী পুজিতা হন শৈলপুত্রী রূপে। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা শৈলপুত্রী। মমতার দেবী মাতা শৈলপুত্রী। ভক্তিভরে শৈলপুত্রীর পুজো করলে সুখ ও সিদ্ধি লাভ সম্ভব। দ্বিতীয়াতে দেবী পুজিতা হন ব্রহ্মচারিণী রূপে। যশলাভের সঙ্গে সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে বিজয়লাভ সম্ভব। আসলে মহেশ্বরকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার আশায় কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন বলেই তিনি ব্রহ্মচারিণীকে অনেকে তপশ্চারিণী বলেও অভিহিত করে থাকেন। তৃতীয়াতে দেবী পুজিতা হন চন্দ্রঘণ্টা রূপে। আসলে হিমালয় যে বাহন দেবীকে দিয়েছিলেন সেই সিংহে সওয়ার চন্দ্রঘণ্টার পুজো করলে মনে আলাদা শক্তি আসে। চতুর্থীতে দেবী পুজিতা হন কুষ্মাণ্ডা রূপে। সমস্ত রোগ-শোক দূর হয় দেবীর এই রূপের পুজো করলে। পঞ্চমীতে দেবী স্কন্দমাতা রূপে পুজিতা হন। ভক্তদের মনবাঞ্ছা পূরণ হয় এই রূপের পুজো করলে।
ষষ্ঠীতে দেবী কাত্যায়নী রূপে পুজিতা হন। ঋষি কাত্যায়নের কন্যাই কাত্যায়নী। মনে করা হয়, বংশের কন্যার ইচ্ছামতো বরলাভের জন্যই কাত্যায়নীর পুজো। সপ্তমীতে দেবী পুজিতা হন কালরাত্রি রূপে। কালরাত্রীর পুজো করলে অসুরের নাশ হয়। তাই দুর্গার আরএক নাম কালরাত্রী। শুভফল দান করেন বলে অনেকে শুভঙ্করীও বলে থাকেন। অষ্টমীতে মহাগৌরী রূপে পুজিতা হন দেবী। গৌরবর্ণা দেবী শিবের অর্ধাঙ্গিনী। এই দিনে দেবীকে চুনরি দিলে সৌভাগ্যলাভ করা হয়। নবমীতে দেবী পুজিতা হন সিদ্ধিদাত্রী রূপে। দেবী দুর্গার নবম রূপ এটি। যে কোনও আটকে থাকা বা দুরূহ কাজ সম্পন্ন হয়।
আসলে দেবীকে পুজো করলে ঐশ্বর্য্য-সৌভাগ্য-আরোগ্য-শত্রুহানী ও পরম মোক্ষলাভ করা সম্ভব হয়। তাই দেবীর ভক্তরা বছরে দুটি এবং সাধকরা বছরে চারটি নবরাত্রীই পালন করে থাকেন। মনে রাখতে হবে শিব অর্থাৎ মহেশ্বর কিন্তু পরম বৈষ্ণব। তাই দেবী বৈষ্ণবী রূপেও পুজিতা হন। আবার দশমীতে ঘট বিসর্জনের পর দেবী অপরাজিতার পুজো করা হয়ে থাকে। দেবীর আর এক নাম যে অপরাজিতা। কিন্তু, মনে রাখতে হবে, নারী শক্তির পুজো করলেই শুধু হবে না। গৃহে যে নারী রয়েছেন তিনি গর্ভধারিনি হোন বা স্ত্রী কিংবা কন্যা। তাঁদের সকলকে সম্মান ও মর্যাদা না দিলে দেবী দুর্গার যতই পুজো করুন না কেন, তিনি রুষ্ট হন। অতএব, কন্যা ভ্রুণ হত্যা, কিংবা স্ত্রীর উপর অত্যাচার, জননীকে অবহেলা করা মানে আপনি যতই পুজো করুন না কেন, আসলে পাপের বোঝাই আপনি বহন করছেন। অতএব…ইয়া দেবী সর্ব্বভুতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা…