তপনের মৃত্যু ঘিরে এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা না অসুস্থতা—তা স্পষ্ট নয়।
বিশ্বজিৎ নস্কর, সাংবাদিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনা- রাজস্থানে কর্মরত অবস্থায় এক ভারতীয় সেনা জওয়ানের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গঙ্গাসাগরের খাস রামকর যমুনাখালী এলাকায়। মৃত সেনা জওয়ানের নাম তপন জানা (৩১)। ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত থাকলেও তিনি রাজস্থান দু’নম্বর রাজপুত রেজিমেন্টের কমান্ডো পদে নিযুক্ত ছিলেন।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২০শে জুন সেনাবাহিনীর তরফে তপনের পরিবারকে ফোন করে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। খবরটি পাওয়ার পর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। ২২শে জুন, রবিবার বিকেলে কফিনবন্দি অবস্থায় তপনের দেহ এসে পৌছায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে। সামরিক মর্যাদায় দেহ ঘিরে রাখেন সেনা জওয়ানরাই। দেহ পৌছনোর সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা এলাকা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তপন জানা। খুব অল্প সময়েই কর্তব্যপরায়ণতা ও দক্ষতার জন্য তিনি রাজপুত রেজিমেন্টের কমান্ডো পদে উন্নীত হন। সম্প্রতি তাঁর দিদির মৃত্যু হয়। সেই সময় শেষকৃত্যের জন্য ১২ দিনের ছুটিতে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। তারপর কর্মস্থলে ফিরে যান। পরিবার ও স্থানীয়দের মতে, দিদির মৃত্যু তপনের উপর প্রবল মানসিক প্রভাব ফেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা গুরুপদ মাইতির কথায়, “তপন খুবই ভাল ছেলে ছিল। দিদির মৃত্যুর পর ও একেবারে ভেঙে পড়ে। মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছিল, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। এখন হঠাৎ করে এমন মৃত্যু মানতেই পারছি না।”
তপনের মৃত্যু ঘিরে এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা আরও বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা না অসুস্থতা—তা স্পষ্ট নয়।
তদন্তে নেমেছে ভারতীয় সেনা। তপনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। যদিও পরিবারের দাবি, তপনের মধ্যে কোনও আত্মহননের ইঙ্গিত ছিল না। বরং তিনি পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন।
তাঁর মৃত্যুর পর গঙ্গাসাগর সহ গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। “তপনের মতো একজন সাহসী ছেলেকে আমরা হারালাম। ও শুধু সেনা ছিল না, ছিল আমাদের এলাকার গর্ব,”—বলেছেন এলাকার আর এক প্রবীণ বাসিন্দা।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তপনের মৃত্যুর রহস্য ঘিরে প্রশ্ন থেকেই যাবে। পরিবারের তরফে শেষ আশা, সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে তাঁদের ছেলের মৃত্যুর আসল কারণ সামনে আসুক।