ওয়েব ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে গিয়েছে। বাকি রয়েছে আরও ছয় দফা। ফলে প্রচারের তাপ ও উত্তাপ দুইই চড়ছে। সেই উত্তাপে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্যের ৪২ টি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কারও হাতিয়ার পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান, কারও আবার ঢালাও প্রতিশ্রুতি। ভোটের উত্তাপ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে মহানগর থেকে জেলায়।
তবে একযোগে জেলাকে টেক্কা দিচ্ছে কলকাতা। বিগত পাঁচ বছরে কতটা বদলেছে কলকাতা? আগের চেয়ে কতটাই বা উন্নতি হয়েছে এই শহরের। কলকাতার মানুষ কী ভাবছেন, আগামী দিনে ক্ষমতায় নতুন সরকার এলে তার কাছেই বা প্রত্যাশা কী? মানুষের খবর নিতে আরপ্লাস নিউজ পৌঁছে গেছে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোয়। আজ নজরে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র ।
রাজনৈতিক পালাবদলের বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই শহর। চোখের সামনে বদলে যেতে দেখেছে অলি-গলি থেকে রাজপথ। বদল এসেছে। তবে কতটা মিটেছে সাধারণ মানুষের সমস্যা? উত্তর খুঁজতে আরপ্লাস নিউজের আজকের গন্তব্য কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র। মাত্রাছাড়া দূষণ, দারিদ্র, কর্মসংস্থানের অভাবের বোঝা নিয়ে বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে এই শহর।
কেমন দেশ দেখতে চান? পথচলতি এক ব্যক্তির উত্তর, “যেখানে একজন মানুষ ফ্রিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা এবং বলার অধিকার পাবেন।” আরপ্লাস নিউজ উঁকি দিয়েছিল ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি অঞ্চলে। অপ্রাপ্তি থাকলেও সেখানকার বাসিন্দাদের বক্তব্য দিদি আসার পর থেকে উন্নতি হয়েছে। হঠাৎই দৃপ্ত কন্ঠে এক মহিলা বলে ওঠেন “দিদিই যেন থাকে”। কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র বরাবরই তারকাখচিত এবং এই কেন্দ্রের বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এবারও সেখানে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র
তৃণমূল প্রার্থী – মালা রায়
বিজেপি প্রার্থী – চন্দ্রকুমার বসু
সিপিআইএম প্রার্থী – নন্দিনী মুখোপাধ্যায়
কংগ্রেস প্রার্থী – মিতা চক্রবর্তী
কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্র রাজনীতির নানা উত্থান পতনের সাক্ষী থেকেছে। ১৯৯১ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে এক নাগাড়ে জয় পেয়েছে প্রথমে কংগ্রেস ও পরে তৃণমূল। এবারও কি উঠবে সবুজ ঝড় নাকি অঘটন? প্রহর গুনছে কলকাতা দক্ষিণ। কী ভাবছেন প্রার্থীরা, জানালেন আরপ্লাস নিউজের মুখোমুখি হয়ে।
কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মালা রায়ের প্রচার চলছে জোরকদমে। প্রচারের ফাঁকে আরপ্লাস নিউজের মুখোমুখি হয়ে প্রার্থী জানালেন, “গত পাঁচ বছরে মোদী সরকার যেভাবে ভারতকে খন্ড খন্ড করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে,তার বিরুদ্ধে মানুষ এবার রায় দেবে। “ পাশাপাশি জয় নিয়ে তিনি যে কনফিডেন্ট তাও জানালেন আরপ্লাস নিউজের মুখোমুখি হয়ে।
লড়াই তাঁর রক্তে। তিনি বিখ্যাত বসু পরিবারের সন্তান চন্দ্রকুমার বসু। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী। নানা লড়াই, সংগ্রাম নিজের চোখে দেখেছেন। তিনি মনে করেন তাঁর দল সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে চলেছে। জয়ের ব্যপারে কোনও সন্দেহ নেই চন্দ্রকুমার বসুর। যদিও গত বিধানসভা ভোটেই হেরেছিলেন তিনি।
অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেও ১৯৯১ সাল থেকে টানা প্রথমে কংগ্রেস ও পরে তৃণমূলের দখলে এই কেন্দ্র। এবার কী লাল ঝড় উঠবে? উত্তরে কলকাতা দক্ষিণের বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যয়ী জবাব, “আমি খুবই আশাবাদী। কারণ মানুষ গত পাঁচ বছর বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতা দেখে নিয়েছে। এবং গত সাড়ে সাত বছরে তৃণমূল সরকারের গুন্ডামি, তোলাবাজি, দুর্নীতি এবং অকর্মন্নতা দেখেছে। মানুষ এখন বীতশ্রদ্ধ।” পাশাপাশি নন্দিনীর অভিযোগ, এলাকার প্রাক্তন সাংসদ কিছু করেননি। এমনকি উন্নয়ন তহবিল খাতে ২৫ কোটির জায়গায় মাত্র ১৭ কোটি আনতে পেরেছেন তিনি।
অন্যদিকে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে মিতা চক্রবর্তীকে। লন্ডনের এই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের রাজনীতিতে আসা কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের হাত ধরে। এই লড়াই তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এখান থেকে আগে কংগ্রেসের টিকিটেই জিততেন মমতা। এখানে এখনও কংগ্রেসের অনেক পুরনো ভোটার আছেন। তাঁদের ভোট ফিরিয়ে নিয়ে আসাই তাঁর লক্ষ্য।
কলকাতা দক্ষিণের সাতটি বিধানসভাই তৃণমূলের হাতে। সাংগঠনিক তৃণমূলকেই তাই শক্তিশালী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নিজস্ব শক্তির নিরিখে বিজেপিরও বাড়বৃদ্ধি হয়েছে অনেকটাই। বাম- কংগ্রেস এই কেন্দ্রে আলাদা প্রার্থী দেওয়ার ভোট কাটাকুটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। তবে লোকসভা ভোট অন্য ভোট। আগে থেকে কখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। অনেক সময় সব সমীকরণই বদলে যায়। কলকাতা দক্ষিণ এবার কী রায় দেয়, এখন তারই প্রতীক্ষা।