ভারতীয় জনতা পার্টির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, হিন্দু মহাসভা, রামরাজ্য পরিষদ ও ভারতীয় জনসংঘ মিলে ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিতে বৃহৎ সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালায়। সেই সময়েই শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশের চেষ্টায় গ্রেফতার হন এবং তার কিছুদিন পরেই, ২৩শে জুন, ১৯৫৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট জাতীয়তাবাদী নেতা ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার শ্রদ্ধা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে স্মরণ করে বলেন, “দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় তিনি যে অতুলনীয় সাহস ও পরিশ্রম দেখিয়েছেন, তা জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”
ভারত ভাগের পর কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৩ সালের ২৩ জুন কাশ্মীরে গ্রেফতার অবস্থায় মারা যান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি অনুমতি ছাড়াই জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশ করেছেন—যা ছিল সেই সময়কার ৩৭০ ধারা অনুযায়ী অবৈধ। গ্রেফতারের ৪৫ দিনের মাথায়, কারাবন্দি অবস্থায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় তাঁর।
প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির শহিদ দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। দেশের অখণ্ডতা বজায় রাখতে তিনি যে অতুলনীয় সাহস ও উৎসর্গ দেখিয়েছেন, তা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে. পি. নাড্ডাও তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখেন, “ভারতমাতার গর্বিত সন্তান, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জিকে তাঁর ত্যাগ ও নিষ্ঠার জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেছিলেন ভারতের একতা, অখণ্ডতা ও আত্মসম্মানের জন্য।”
তিনি আরও লেখেন, “কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ রাখার জন্য আজীবন রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। ‘এক দেশ, এক বিধান, এক প্রধানমন্ত্রী, এক নিশান’-এর ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তিনি জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বিজেপির ভিত্তি তৈরি করে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকড়ীও শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়
কে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে দেশের অখণ্ডতার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন তিনি। তাঁর আত্মত্যাগ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় থাকবে।”
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ লেখেন, “এক দেশ, এক বিধান, এক প্রধানমন্ত্রী, এক নিশান—এই অঙ্গীকারের রচয়িতা, ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির শহিদ দিবসে শ্রদ্ধা জানাই। দেশের একতা ও অখণ্ডতার জন্য তাঁর আত্মবলিদান আজও সকল ভারতবাসীর জন্য প্রেরণার উৎস।”
১৯৫৩ সালে তিনি কাশ্মীর যাওয়ার সময় সরকার নির্ধারিত অনুমতি না নেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হন। সেই সময় কাশ্মীরে প্রবেশের জন্য আলাদা পারমিট লাগত, ৩৭০ ধারা অনুযায়ী। তিনি এই ব্যবস্থাকে ভারতের বাল্কানাইজেশন বলেছিলেন এবং শেখ আব্দুল্লাহর ‘তিন জাতির তত্ত্ব’-এর সঙ্গে তুলনা করেন।
তাঁর মৃত্যুর পরে সারা দেশে ‘এক দেশ, এক বিধান, এক প্রধানমন্ত্রী, এক নিশান’ স্লোগানটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে কাশ্মীরের আলাদা পারমিট ব্যবস্থা বাতিল করা হয়।
ভারতীয় জনতা পার্টির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, হিন্দু মহাসভা, রামরাজ্য পরিষদ ও ভারতীয় জনসংঘ মিলে ৩৭০ ধারা বিলোপের দাবিতে বৃহৎ সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালায়। সেই সময়েই শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কাশ্মীরে প্রবেশের চেষ্টায় গ্রেফতার হন এবং তার কিছুদিন পরেই, ২৩শে জুন, ১৯৫৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ডঃ মুখোপাধ্যায়ের ত্যাগ এবং আদর্শ আজও ভারতের জাতীয় জীবনে একটি শক্তিশালী দিকচিহ্ন হয়ে রয়েছে।