পাকিস্তান জুড়ে এই মুহূর্তে তীব্র জলকষ্ট। সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তানে এয়ার স্ট্রাইক করেছিল ভারত। স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল সিন্ধু জলচুক্তি সেই সিদ্ধান্তই এখনও জারি রয়েছে। কার্যত ধুঁকছে পাকিস্তান। ভারত জল না দিলে যুদ্ধ হবে, এমনই হুঁশিয়ারি দিল পাকিস্তান।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিকঃ সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জল না পেয়ে কার্যত ধুঁকছে পাকিস্তান যার ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থা। সঙ্কট দেখা দিয়েছে শিল্পেও। এই পরিস্থিতিতে এবার সিন্ধুর জল নিয়ে ভারতকে হুমকি দিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো। পাক সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিলাবল বলেন, ‘’সিন্ধুর জলের জন্য যত দূর প্রয়োজন পাকিস্তান যাবে।’’ ভারতকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শনিবার জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষবিরতি হলেও পাকিস্তানের সঙ্গে কখনওই সিন্ধু জলচুক্তি পুনর্বহাল করবে না ভারত। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি খাল খনন করে পাকিস্তানে প্রবাহিত জল রাজস্থানে নিয়ে যাব। পাকিস্তান অন্যায় ভাবে যে জল পাচ্ছে, তা আর পাবে না।ওদের এবার শুকিয়ে মরতে হবে।’’ পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক শাহের এই মন্তব্যকে আন্তর্জাতিক চুক্তির “প্রকাশ্য লঙ্ঘন” হিসাবে সমালোচনা করেছে। শাহের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই সোমবার পাক পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী বিলাবল বলেন, ‘‘ভারতের সামনে এখন ন্যায্য ভাবে জল ভাগাভাগি করার বিকল্প খোলা রয়েছে। অথবা আমরা ছ’টি নদী অর্থাৎ সিন্ধু নদী ব্যবস্থার অন্তর্গত সমস্ত নদীর জলই আমাদের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব।’’
বিলাবল আরও বলেন যে, “সিন্ধুর জল আনার সেক্ষেত্র যদি যুদ্ধে যেতে হয়, ইসলামাবাদ তার জন্যও প্রস্তুত।“। তিনি বলেন, “যদি ভারত ও পাকিস্তান আলোচনায় না বসে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দু’দেশের মধ্যে যদি কোনও সমন্বয় না থাকে, তাহলে উভয় দেশেই হিংসা আরও তীব্র হবে।”
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার পরই ভারত পাল্টা কূটনৈতিক পদক্ষেপে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বাতিল করে। তারপর থেকেই জল নিয়ে পাকিস্তানের এই দুর্দশা আরও প্রকাশ্যে চলে আসে। উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে ভারত এবং পাকিস্তান বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জলচুক্তি সই করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ থাকবে এবং ভারতের থাকবে ২০ শতাংশ ভাগ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত ওই জল ব্যবহার করলেও তা আটকাতে পারবে না পাকিস্তান। দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির দাবি ছিল, সংসোধন করতে হবে সিন্ধু জলচুক্তিতে। কারণ ভারতের নদীবাঁধ দেওয়াতে ইসলামাবাদ প্রবল আপত্তি জানিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নালিশ জানায়। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে চুক্তি সংশোধন চেয়ে ইসলামাদকে কড়া নোটিসও পাঠায় ভারত। তবে পহেলগাঁও হামলার পরে সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে চরম পদক্ষেপ করেছে ভারত। ভারতের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধ ঘোষণার সমকক্ষ বলে আগেই তোপ দেগেছে পাকিস্তান। এবার ভুট্টো সেই তোপকেই আরও বাড়িয়ে তুললেন।