সৈকত শহর দিঘায় জগন্নাথ দেবের নব নির্মিত মন্দির ইতিমধ্যেই সাধারন মানুষের আগ্রহকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। এবার সেই দিঘা শহরের প্রথম রথযাত্রা নিয়েও দুইদিন আগে থেকেই চূড়ান্ত উন্মাদনা দেখা গেলো। প্রস্তুত প্রশাসন, প্রস্তুত মন্দির কমিটি, প্রস্তুত সাধারণ ভক্তজন।
সেলিম আহমেদ, দিঘা- উদ্বোধন(৩০ এপ্রিল’২০২৫) হওয়ার পর গত প্রায় এক মাসের কিছুটা বেশি সময়ে দিঘার জগন্নাথ ধাম দর্শন করেছেন প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। আর এই জগন্নাথ ধাম কে কেন্দ্র করে প্রথম বারের রথযাত্রা, যেন দিঘা কে একটা চূড়ান্ত উন্মাদনার জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। এই ঐতিহাসিক মূহুর্তের সাক্ষী থাকতে ইতিমধ্যেই দিঘায় পৌঁছে গিয়েছেন কয়েক লক্ষ পূণ্যার্থী। রয়েছেন সাধারন পর্যটকও। ফলে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ রয়েছে প্রশাসনের কপালেও।
সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সামাল দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বিকালেই পৌঁছে গিয়েছেন দিঘাতে। এর আগে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কলকতায় মুখ্যমন্ত্রীর পৌরহিত্যে রথযাত্রা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আর গত কয়েকদিন ধরে জেলা প্রশাসন, মন্দির কমিটি তো চূড়ান্ত ব্যস্ত।
সৈকত শহর দিঘার এই রথযাত্রাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসবের আমেজ। মন্দির কমিটি ও প্রশাসন একযোগে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রী তো রয়েইছেন, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পুলক রায়, সুজিত বোস সহ রাজ্য প্রশাসনের একাধিক মন্ত্রী আমলাও বার বার দেখে নিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিঘা শহর সেজে উঠেছে নতুন রূপে। যেহেতু ইতিমধ্যেই প্রচুর পর্যটক দিঘাতে চলে এসেছেন এবং বৃহস্পতিবার আরও প্রচুর পর্যটকের আগমন আশা করা হচ্ছে, সেই কারণে নিরাপত্তার দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রথযাত্রার সূচনা হবে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় গর্ভগৃহ খোলার মধ্য দিয়ে, যেটিকে বলা হয় ‘নেত্র উৎসব’। এরপর (১৫ দিন পর) দুপুরে হবে ৫৬ ভোগ নিবেদন।
প্রশাসন ও মন্দির কমিটি সূত্রে খবর, নারকেলের ছোবড়া ও পাটের সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়েছে রথের রশি। জগন্নাথ ও বলরামের রথে থাকবে ৯০ ফুটের দড়ি এবং সুভদ্রার রথে থাকবে ৭০ ফুটের দড়ি। রথের দিন সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘পান্ডু বিজয়’ অনুষ্ঠান। তখনই রথে আসন গ্রহণ করবেন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। মন্দির কমিটির সদস্য রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, মন্দিরের দক্ষিণ দিকের গেট থেকে দিঘার মূল রাস্তার(১১৬-বি জাতীয় সড়ক) উপর দিয়ে রথ টানা হবে মাসির বাড়ির গেট পর্যন্ত, যা প্রায় ১ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। সেখানেই হবে দ্বিতীয় দফার ‘পান্ডু বিজয়’। এরপর দেবতারা প্রবেশ করবেন মাসির বাড়িতে, এবং ৫ জুলাই পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন।
পুরানো মন্দিরের পাশে গড়ে ওঠা নতুন মন্দিরেই বসানো হয়েছে ‘মাসির বাড়ি’। প্রধান পুরোহিত পূর্ণচন্দ্র নন্দ জানিয়েছেন, এই আদি জগন্নাথ মন্দিরেই প্রতিদিন পূজাপাঠ, ভোগ নিবেদন এবং নতুন পোশাক পরানো হবে দেবতাদের। উল্টোরথ উপলক্ষ্যেও বড়সড় মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। তবে আপাতত অপেক্ষা শুক্রবারের।