ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র টাকিতে ইছামতি নদীর চড় জবরদখল করে একের পর এক বিলাসবহুল হোটেল ও রিসর্ট গজিয়ে উঠছে—এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে উত্তাল এলাকা। নদী ও পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন পরিবেশপ্রেমী মহল, সোচ্চার সাধারণ মানুষও। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাসকদলের একাংশের মদতেই এই বেআইনি নির্মাণ কাজ চলছে দিনের পর দিন।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক- টাকি রাজবাড়ি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে একাধিক হোটেল ও রিসর্ট। অভিযোগ, এদের অধিকাংশেরই নেই কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র বা সেচ দফতরের অনুমোদন। এমনকি, একাধিক হোটেলের মালিকানা রয়েছে শাসকদলের প্রভাবশালীদের হাতে। টাকি পুরসভা সূত্রে খবর, তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সম্পাদক এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ শাহানুর মন্ডলের নাম জড়িয়েছে একটি বিলাসবহুল হোটেলের মালিকানা নিয়ে। অন্যান্য হোটেলগুলির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক যোগসূত্র স্পষ্ট।
নিয়ম অনুযায়ী, জোয়ারের জল যতদূর পৌঁছায়, সেখান থেকে ন্যূনতম ৯ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, একাধিক হোটেল গড়ে উঠেছে একেবারে নদীর গর্ভে। হোটেলের দেওয়ালে প্রতিদিনই ধাক্কা মারছে জোয়ারের জল। ইতিমধ্যে একটি হোটেলের একাংশ হেলে পড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের তরফে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই হোটেল যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা।
এই পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন কলকাতার এক পরিবেশপ্রীয় আইনজীবী তন্ময় বসু। সম্প্রতি টাকি ঘুরতে এসে এলাকা ঘুরে দেখার পর তিনিও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাজ্যের পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, টাকি পুরসভা, বসিরহাট মহকুমা শাসকের দফতর এবং হাসনাবাদ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। এমনকি বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপারকেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, মোটা টাকা দিয়ে প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলছে এই বেআইনি নির্মাণ।
আইনজীবী তন্ময়বাবুর দাবি, দীঘার তাজপুরে সমুদ্রতীরবর্তী বেআইনি হোটেল গুলিকে যেভাবে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট, ঠিক তেমনিভাবে ইছামতির পাড়ে থাকা এই বেআইনি হোটেলগুলিকেও ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হোক। তাঁর মতে, শুধু পরিবেশ রক্ষাই নয়, হাজার হাজার পর্যটকের জীবন রক্ষা সম্ভব হবে এই পদক্ষেপে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরগরম স্থানীয় রাজনীতি। বিরোধী শিবির জানিয়েছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই সমস্ত বেআইনি নির্মাণকে হাতিয়ার করেই পথে নামবে তারা। এখন দেখার, প্রশাসন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়। ইছামতির পাড়ে বেআইনি হোটেল নির্মাণ আদৌ বন্ধ হয় কি না, এখন সেটাই দেখার।