একই সঙ্গে হিন্দু স্কুল ও বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করবেন একজন ব্যক্তি। শিক্ষা দফতরের এমন নির্দেশিকায় হতবাক শিক্ষকমহলের একাংশ। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক সংগঠনগুলিও।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক- কোনও স্কুলের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতে পারে স্কুলের লাইব্রেরিটিকে। পড়ুয়াদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে সপ্তাহে এক থেকে দুদিন লাইব্রেরির ক্লাস করানো হয়। তবে বর্তমানে রাজ্যের একাধিক স্কুলে লাইব্রেরির ক্লাস করানোর জন্য গ্রন্থাগারিকের পদটি ফাঁকা রয়েছে। যে কারণে শহর থেকে গ্রাম বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায়ই অভিযোগ, গ্রন্থাগার সচল না থাকলে পড়ুয়াদের বইমুখী করা কিংবা পাঠদানেও সমস্যা হচ্ছে। স্কুলে লাইব্রেরিয়ানের সমস্যা মেটাতে ভাবনাচিন্তা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে কোনো গ্রন্থাগারিক নেই। সেই অভাব মেটাতে শিক্ষা দফতরের নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে। হিন্দু স্কুলের লাইব্রেরিয়ানকেই সপ্তাহে তিনদিন বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করার নির্দেশ পাঠিয়েছে শিক্ষা দফতর। শিক্ষাদফতরের এই নির্দেশিকায় হতবাক শিক্ষকমহলের একাংশ।
জিষ্ণু ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু স্কুলে লাইব্রেরির শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করছেন। বর্তমানে হিন্দু স্কুলে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে ২৩টি বিভাগ। সুত্রের খবর, হিন্দু স্কুলেই সপ্তাহে সব ক্লাসের লাইব্রেরি ক্লাস করাতে গিয়েই সমস্যায় পড়তে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি তিনি ইংরেজি মাধ্যম থেকে পড়াশোনা করেছেন বলে প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকে ইংরেজি বিষয়েরও ক্লাস নেন। এই বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমেও পড়াশোনা হয়। তবে দুশো বছরের বেশি পুরনো এই স্কুলে শিক্ষকের অভাব। কম শিক্ষক দিয়ে সব ক্লাসের পিরিয়ড নিতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। এই স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমের ক্ষেত্রে শিক্ষক এতটাই কম যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক সব ক্লাস করাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। জিষ্ণু ভট্টাচার্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে পড়াশোনা করায় তিনি অনেকটাই সাহায্য করতেন। তবে শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তে চিন্তায় হিন্দু স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, জিষ্ণু ভট্টাচার্য হিন্দু স্কুলে গ্রন্থাগারিক সপ্তাহে সোমবার,বুধবার ও শুক্রবার হিন্দু স্কুলে লাইব্রেরির ক্লাস নেবেন, আর মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার বালিগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের ক্লাস নেবেন। তবে তাঁর অফিশিয়াল নথিপত্র সব হিন্দু স্কুলের দায়িত্বেই থাকবে। শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক সংগঠনের একাংশ।প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষিকা সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি-র বক্তব্য , “দীর্ঘদিন ধরে লাইব্রেরিয়ান, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষক- শিক্ষিকা ও প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ নেই। যার ফলে এই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু এই দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অবিলম্বে পিএসসি-র মাধ্যমে সরকারি স্কুলে যেমন নিয়োগ হয় তেমন নিয়োগ করতে হবে। লাইব্রেরির বই এর জন্য গ্রান্ড আসছে, কিন্তু আসবাবপত্রের জন্য গ্রান্ড আসছে না। লাইব্রেরির জন্য একজন লাইব্রেরিয়ান লাগে সেই পোস্টগুলো শূন্য। অবিলম্বে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ করা হোক।”