পশ্চিমবঙ্গের এক স্থায়ী বাসিন্দাকে অসম সরকারের পক্ষ থেকে ‘বিদেশি’ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। এই বিষয়ে মঙ্গলবার সকাল সকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কড়া অবস্থানের কথা জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধি– কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা উত্তম কুমার ব্রজবাসী। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে এই বাংলাতেই বাস তার। জন্ম, কর্ম সবকিছুই এই বাংলাতেই। এ হেন উত্তম কুমার কে ‘বিদেশি’ বলে ঠাওড়ে, তাকে ‘স্বদেশী’ কি না প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে এমন নোটিশ পাঠানোয় যারপরনাই বিস্মিত কোচবিহারের দিনহাটার রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসী। এমনকি এই ঘটনা নিয়ে নিজের চূড়ান্ত ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমি হতবাক, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে মর্মাহত। আজ আমি এক গভীর উদ্বেগের খবর পেলাম—কোচবিহারের দিনহাটার রাজবংশী সম্প্রদায়ের একজন নাগরিক উত্তম কুমার ব্রজবাসী, যিনি এই বাংলায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন এবং যাঁর সমস্ত বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে, তাঁকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁকে বলা হয়েছে “বিদেশি”!”
মুখ্যমন্ত্রী আরো লিখেছেন, “উত্তম কুমার ব্রজবাসী একজন ভারতীয় নাগরিক, একজন বাঙালি, যিনি এদেশে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, যাঁর সমস্ত কাগজপত্র আছে, তাঁকে এভাবে বিদেশি তকমা দেওয়া একটা চরম অন্যায় এবং গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে।”
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, “এই ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পেছনে আছে একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। তারা চায় বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে। তারা চায় প্রান্তিক, আদিবাসী, রাজবংশী, মতুয়া, নমঃশূদ্র, মুসলিম—সব সম্প্রদায়কে আতঙ্কে রাখতে।
তারা চায় বাংলার গর্ব, পরিচয় ও আত্মমর্যাদা মুছে দিতে। তারা চায় এনআরসি-র নামে মানুষকে “নাগরিক নয়” বলে ঘোষণা করে তাঁদের ভোটাধিকার, বাসস্থান, ও মানবাধিকার কেড়ে নিতে।”
এই বিষয়ে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, “আমি স্পষ্ট করে বলছি—অসমে যা হচ্ছে, তা বিজেপি বাংলাতেও চাপিয়ে দিতে চায়। এটা শুধুমাত্র একজন উত্তম ব্রজবাসীর নয়, এটা প্রতিটি বাঙালির অস্তিত্বের প্রশ্ন। এটা গণতন্ত্রের উপর নির্লজ্জ হামলা। আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, আমরা এই অন্যায় বরদাস্ত করব না। আমরা এনআরসি বাংলায় করতে দেব না। আমরা বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে দেব না।”