আজও ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে, সজাগ দৃষ্টিতে যেন বাংলার রাজনীতিকে পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। আজ ৮ জুলাই, প্রবাদপ্রতীম বাম নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ১১২তম জন্মদিন। সাত দশকেরও বেশি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যে ছাপ তিনি রেখে গিয়েছেন, তা আজও ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, নিজস্ব প্রতিনিধি- জ্যোতি বসু শুধুমাত্র একজন মুখ্যমন্ত্রী নন, বরং তিনি ছিলেন এক চলমান প্রতিষ্ঠান। তাঁর জীবনযাত্রা, তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা আজও বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন বিধানসভায় বামেদের কোনও প্রতিনিধি নেই, তখন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় খোলাখুলি বলেন— ‘জ্যোতি বসুর হাতে গড়া সিপিএম আজ শূন্য। সত্যিই খারাপ লাগে।’
তবে সমালোচনাও বাদ যায়নি। ২১ জুলাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন— ‘ওই দিনে গুলি না চালালেও চলত।’ তবুও স্পিকার মনে করিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া ছিল এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক সততার নিদর্শন।
১৯১৪ সালের আজকের দিনে জন্ম জ্যোতিরিন্দ্র বসুর। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইংল্যান্ডে যান আইন পড়তে। সেখানেই রাজনীতির হাতেখড়ি। দেশে ফিরে যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। রেল শ্রমিক আন্দোলন থেকে শুরু করে বামপন্থী রাজনীতির ভিত গড়ে তোলা— সবেতেই তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
১৯৭৭ থেকে ২০০০— টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী। ভূমি সংস্কার, গ্রামীণ প্রশাসন, শ্রমিক অধিকার— এই তিন স্তম্ভে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর শাসন। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা হাতছাড়া হয় দলের আপত্তিতে। পরে নিজেই বলেন, “ঐতিহাসিক ভুল”।
আজ যখন রাজ্যের রাজনীতির স্রোতে বহু পরিবর্তন, তখন বারবার ফিরে আসে জ্যোতি বসুর নাম। কারণ, রাজনীতিতে আদর্শ, শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের এক দুর্লভ সম্মিলন ছিলেন তিনি। বাম নেই, কিন্তু বামপন্থার ইতিহাসে জ্যোতির আলোর স্থান আজও অমলিন।