বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ঘিরে বিতর্ক। স্নাতকের ষষ্ঠ সেমেস্টারের ইতিহাসের ১২নম্বর প্রশ্নে লেখা আছে, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম করো, যাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হন?‘ এই প্রশ্ন প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় শিক্ষকমহলে।
নাজিয়া রহমান, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘ সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যায় প্রশ্নের মুখে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমেস্টার ইতিহাস বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। ইতিহাসের ১২নম্বর প্রশ্নে লেখা আছে,‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম করো, যাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হন?‘ প্রসঙ্গত, ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ সাল। ইংরেজ শাসনকালে এই তিন বছরে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করা হয়। যথা,১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডিকে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে গুলি করে হত্যা করেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ। তার ঠিক একবছর পর ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল, আর এক ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট ডগলাসকে জেলা বোর্ডের অফিসে ঢুকে হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, প্রভাংশুশেখর পাল। এবং এরপরের বছর ১৯৩৩-এর ২ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুরের একটি মাঠে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্নাড ই জে বার্জকে হত্যা করেন স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন দত্ত ও নির্মলজীবন ঘোষ।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের “সন্ত্রাসবাদী ” বলে উল্লেখ করায়,কেন এই ধরণের শব্দ চয়নকরা হয়েছে তার নিন্দায় সরব হয়েছেন শিক্ষকমহল।
বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদি আখ্যা দেওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের।শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারীর বক্তব্য, “এখন ইংরেজ আমল নয়, স্বাধীন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের যেভাবে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং দূরভিসন্ধিমূলক। ছাত্র-ছাত্রী এবং সমাজের কাছে এইসব স্মরণীয় বিপ্লবী চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসকে ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে ইতিহাস বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে প্রতিবাদ জানানো হোক। না হলে মনে করব ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে সর্বসমক্ষে বিবৃতি দাবি করছি।”
এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা চাপের মুখে পড়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেন এমন ভুল হল? এই প্রশ্নের প্রশ্নকর্তা কে, মডারেশনের দায়িত্বে কে ছিলেন, তা নিয়ে পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। দু-এক দিনের মধ্যেই সে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিরোধীরা এই বিষয়টিকে নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে ই-মেলে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি বলে জানা গেছে।